সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার চেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেওয়া দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। আপিল বিভাগের রায়ের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। এতে ২০১৮ সালের জারি করা পরিপত্র বাতিল করে নতুন প্রজ্ঞাপনে চাকরিতে মেধায় শতকরা ৯৩ শতাংশ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি, নারী ও জেলা কোটা বাতিল হয়েছে।  

এদিকে অহিংস কোটা সংস্কার আন্দোলনে হঠাৎ করেই দুষ্কৃতকারীদের অনুপ্রবেশে সহিংস হয়ে ওঠে। এতে রাজধানী ঢাকা, রংপুর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, কুমিল্লাসহ সারা দেশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও উন্নয়ন অবকাঠামোয় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ-আনসার, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, দুষ্কৃতকারী ও সাধারণ মানুষ হতাহত হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষাসহ দেশবাসীর জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অরাজকতা নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার গত শনিবার (২০ জুলাই) কারফিউ দেয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

বর্তমানে দেশের অন্যান্য জেলার মতো রংপুরেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে স্বস্তি ফিরছে জনমনে। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢুকে পড়া নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষতচিহ্ন এখনো সাধারণ মানুষের চোখের সামনে ভাসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেসব দুষ্কৃতকারীদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তৎপরতা রেখেছে। বুধবার (২৪ জুলাই) কারফিউ শিথিল থাকায় অনেকটা স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফিরেছে মানুষজন। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সঙ্গে বাড়ছে দ্রুত কারফিউ তুলে নেওয়ার দাবি।  

এদিকে কয়েকদিন ধরে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার পর এখন তা ধীরে ধীরে সচল হতে শুরু করেছে। অনলাইন গণমাধ্যমের নিয়মিত পাঠকদের জন্য শুক্রবার থেকে বুধবার (আজ) দুপুর পর্যন্ত উত্তরের বিভাগীয় নগরী রংপুরে ঘটে যাওয়া চিত্র তুলে ধরা হলো।

রংপুরে যেভাবে নৈরাজ্য চলে

রংপুর নগরীতে শুক্রবার (১৯ জুলাই) সকাল থেকেই ছিল না কোনো উত্তাপ। ওইদিন সরকারি ছুটি থাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ঘোষিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে সুনশান ছিল পুরো নগর। আগের দিনের (বৃহস্পতিবার) তাণ্ডবের ক্ষতচিহ্ন রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নজর কাড়ে সাধারণ মানুষের। এরই মধ্যে শুক্রবার জুমার নামাজের পর শান্ত রংপুর ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রংপুর জিলা স্কুল মোড়, সিটি পার্ক মার্কেট চত্বর, পায়রা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, বিএনপির কার্যালয় সংলগ্ন গ্র্যান্ড হোটল মোড়, শাপলা চত্বর, পুরাতন ট্রাক স্ট্যান্ড, কলেজ রোড চারতলার মোড়, লালবাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়, মডার্ন মোড়, দর্শনা মোড়, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা ও ধাপ চেকপোস্ট এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের হয়। কোথাও কোথাও পুলিশ বক্স ভাঙচুর করা হয়।

এসব মিছিলে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী, সমর্থকরা ছাড়ও দুর্বৃত্তরা অংশ নেয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গ্র্যান্ড হোটেল মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। সেই মিছিল থেকে বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের সাইনবোর্ডে ইটপাটকেল ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। এ সময় সমবায় মার্কেট, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, ঢাকা ব্যাংকের বুথে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালানো হয়।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় নগরীর আকাশ। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও আসবাবপত্রে আগুন দেয় হামলাকারীরা। নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের তাণ্ডবে বাদ পড়েনি সদর হাসপাতাল সংলগ্ন পরিবার পরিকল্পনার কার্যালয়। মা ও শিশুদের জন্য নির্মিত এই সরকারি সেবাপ্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়াসহ বেশ কয়েকটি যানবাহনে আগুন দেন তারা।

এদিকে শুক্রবার বিকেলের পর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মিছিলে রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর থেকে জিলা স্কুল মোড় পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয় রাজপথ। এ সময় দেশীয় অস্ত্র ছাড়াও লাঠিসোঁটা দিয়ে আতঙ্ক ছড়ায় বিক্ষোভকারীরা। তাদের সরকারবিরোধী স্লোগান আর থেমে থেমে ছোড়া ইটপাটকেল ও ভাঙচুরের তাণ্ডবে ভীতিকর অবস্থা তৈরি হয় পুরো নগরজুড়ে। এই সহিংস পরিস্থিতিতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করার পাশাপাশি, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অর্ধশতাধিকেরও বেশি আহত হন। মিলন, সাজ্জাদ ও মিরাজ নামে তিনজনের মৃত্যু হয়। পরে আরও দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

এদিকে নগরীর বিভিন্ন এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার (১৯ জুলাই) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মাঠে সরব থাকতে দেখা যায়নি। এদিন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী ছাড়াও রংপুর নগরের বাইরে থেকে আসা বহিরাগত লোকজন ও দুর্বৃত্তদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তারা মিছিল থেকে নগরীতে নজিরবিহীন তাণ্ডব চালিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে স্থাপিত মুজিব শতবর্ষের দিনক্ষণ গণনার স্থাপনায় আগুন, লালবাগ থেকে পার্ক মোড়ে সড়কের রোড দুই পাশের গাছপালা ভেঙে, সিটি কর্পোরেশনের ফটকে হামলা, মোড়ে মোড়ে সিসিটিভি ভাঙচুর, বিভিন্ন চত্বরের বেষ্টনী ভাঙচুর, সড়ক নিরাপত্তায় ব্যবহৃত মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি, সাইনবোর্ড ও রোড ডিভাইডারের ক্ষতিসাধন করেন হামলাকারীরা। এর আগের দিন তারা নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি, মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়, আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগর এবং জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। 

অনেকেই বলছেন, এটি শুধু কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদেরকে সমর্থন দিয়ে মাঠে থাকা নয়। অনেক রাজনৈতিক দল ও দুর্বৃত্তরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের জানমালের যেমন ক্ষতি হয়েছে তেমনি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শুক্রবার সকালে নগরীর পায়রা চত্বরে আগের দিন (১৮ জুলাই) পোড়ানো বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল পড়ে থাকতে দেখা যায়। এর পাশের সেন্ট্রাল রোডে নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি ও মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ের সামনেও ছিল তাণ্ডবের ক্ষতচিহ্ন। সেখানেও আগুনে পোড়া কংকাল মোটরসাইকেল পড়ে ছিল। আর পুলিশ ফাঁড়ি ও গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ে ছিল ধোঁয়ার গন্ধ। সেখানে থাকা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সব কিছু পুড়ে গেছে। এছাড়া নগরীর মডার্ন মোড়ে তাজহাট থানার সামনে আগুনে পোড়া তিনটি ট্রাক, থানার ভেতরেও ছিল দগদগে ক্ষতচিহ্ন। এর পাশে রংপুর মডেল কলেজ সংলগ্ন সড়কে আরও তিনটি আগুনে পোড়া গাড়ি পড়ে থাকতে দেখা যায়।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) পার্ক মোড় থেকে মডার্ন মোড় হয়ে মডেল কলেজ সংলগ্ন সড়কের আশপাশসহ প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী, সমর্থক, সাধারণ মানুষ অবস্থান নেয়। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হটিয়ে তাজহাট থানা ঘেরাও করে। পরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে থানার ভেতরে-বাইরে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধরা। এদিন মানিক মিয়া নামে এক অটোরিকশা চালকের মৃত্যু হয়।  

কারফিউ জারির পর রংপুর

এদিকে সারা দেশে কারফিউ জারির পর শনিবার (২০ জুলাই) রংপুর নগরে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পুরো নগরজুড়ে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও ব্যাপক তৎপর ছিল। মোড়ে মোড়ে বসানো চেকপোস্টে তল্লাশিসহ জিজ্ঞাসার মুখে পড়েন বাইরে বের হওয়া মানুষজন। শিথিলের সময় ছাড়াও নগরীতে মানুষের আনাগোনা কম ছিল। বন্ধ ছিল দোকানপাট। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষজনও বাইরে বের হয়নি। তবে কারফিউয়ের সঙ্গে সাধারণ ছুটি বাড়তে থাকতে থাকায় দিনে দিনে সড়কে যানবাহন চলাচল বাড়ছে। সঙ্গে মানুষও বের হতে পারছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা টহলের পাশাপাশি দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের মনে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।

বুধবার (২৪ জুলাই) পঞ্চম দিনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়। ব্যাংক-বীমা, আদালত, সরকারি-বেসরকারি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সঙ্গে সাধারণ ছুটি না থাকায় অন্যান্য দিনগুলোর তুলনায় মানুষের উপস্থিতি বাড়ে সবখানে। সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিও বেড়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর মোড়ে মোড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করাসহ সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আজ নগরীর কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ড এলাকা থেকে দূরপাল্লার কয়েকটি বাস ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় চলছে পণ্যবাহী পরিবহনও।

ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে বিভাগীয় কমিশনারসহ যৌথ বাহিনী

গত রোববার (২১ জুলাই) সকাল থেকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়, নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি, তাজহাট থানা, পরিবার-পরিকল্পনার কার্যালয়সহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও এলাকা পরিদর্শন করেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন। এ সময় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) আবু জাফর, রংপুর  মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (আরপিএমপি) মো. মনিরুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান, জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানসহ যৌথ বাহিনীর অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

ছাত্ররা এগুলো করতে পারে না : বিভাগীয় কমিশনার

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন বলেন, ধ্বংসযজ্ঞ তাজহাট থানা, গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়, পুলিশ ফাঁড়ি, পুলিশ লাইন্সসহ সমস্ত কিছু দেখেছি। যারা হামলা চালিয়েছে এটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। নৈরাজ্যের চরম অবস্থা, কোনো ভাবেই এরা (হামলাকারীরা) দেশপ্রেমিক মানুষ নয়। এটা ছাত্ররাও করেছে বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে না। ছাত্ররা এগুলো করতে পারে না এবং তারা এসব করেনি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে অনেক ফুটেজ রয়েছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে থাকা সব ফুটেজ, ছবি, তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অবশ্যই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নৈরাজ্যকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে : আরপিএমপি কমিশনার

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনাগুলো এত ভয়াবহ যে মামলা করতে আমাদের অনেক সময় লাগছে। কারণ যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, যে পরিমাণ আলামতের ক্ষতি হয়েছে, বিভিন্ন জ্বালাও পোড়াও হয়েছে, মামলার ডকেট পুড়েছে, পুলিশ ফাঁড়ি পুড়েছে, গাড়ি পুড়ছে। অনেক কিছুর ক্ষতি হয়েছে, মামলা করতে সময় লাগবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আইনানুগ সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেব এবং পেশাগত দায়িত্ব থেকেই সেটা অতি দ্রুততার সঙ্গে নেব। আমরা এজন্য নগরবাসীসহ সকলের সহযোগিতা চাই। আমরা দেখছেন কারফিউ জারি হয়েছে। সেনাবাহিনীসহ যৌথ বাহিনীর টহল অব্যাহত আছে। নগরজীবন স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আমরা যারা এসব নৈরাজ্যের সাথে জড়িত তাদেরকে আমরা গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছি।

পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা মনে করছি এই ধ্বংসযজ্ঞ কোনো সুস্থ ও বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের দ্বারা হতে পারে না। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য এদের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। জামায়াত, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এই নৈরাজ্যসহ সংঘর্ষে নেতৃত্ব ও উসকানি দিয়েছে এবং জ্বালাও পোড়াওয়ে সামনের সারিতে থেকেছে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকিরাও অচিরেই গ্রেপ্তার হবে। আমরা এটি কোনো ভাবেই এমনি এমনি যেতে দেব না।

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জেনেছি আনুমানিক ২০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। এর চেয়েও বেশি যে ক্ষতি, সেটা হচ্ছে মামলার ডকেট পুড়ে গেছে। তার চেয়েও বেশি মানুষের ভেতরে ভীতি তৈরি হয়েছে। পুলিশকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়েছে, হাসপাতালে আগুন দিয়েছে, এটাতো সভ্যতার সকলসীমা অতিক্রম করেছে। ক্ষয়ক্ষতির চেয়ে এটা অনেক বেশি বড় ক্ষতি।

অব্যাহত বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১২০

আরপিএমপি কমিশনার জানান, বুধবার (২৪ জুলাই) সকাল পর্যন্ত ১০টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আরও মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে ৯৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। যারা ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত, যাদের সম্পর্কে আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছি তারাই গ্রেপ্তার হয়েছে।

অন্যদিকে জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান জানান, রংপুরের আট উপজেলা থেকে গত কয়েকদিনে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থক রয়েছে। এই বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে কোটা সংস্কারে দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আবু সাঈদ নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হন। এ ঘটনার পর আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে গোটা জেলাজুড়ে। নিহত আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর