নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের মধ্যে আরও ১৫৬ জন নরসিংদী আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। বুধবার (২৪ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তারা আত্মসমর্পণ করেন। এ নিয়ে গত তিন দিনে আত্মসমর্পণকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯৪ জনে। 

এর আগে সোমবার ১০ জন এবং মঙ্গলবার ১২৮ জন বন্দি আত্মসমর্পণ করেন। 

নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কাজী নাজমুল ইসলাম জানান, আত্মসমর্পণকারী বন্দিদের হলফনামায় স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। তাদেরকে নরসিংদী জেলা ও দায়রা জজ মাহবুবুর রহমান সরকারের আদালতে হাজির করা হবে। সেখান থেকে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, নরসিংদী জেলা কারাগারটি শহরের ভেলানগরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত। এই ভেলানগর ও জেলখানা মোড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা কয়েকদিন ধরেই লাগাতার বিক্ষোভ-সমাবেশ করছিলেন। শুক্রবারও সেখানে একই রকমভাবে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করছিলেন। তবে সেদিন সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের খুব একটা দেখা যায়নি। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হঠাৎ করেই হাজারো জনতা কারাগারের দিকে এগোতে থাকে। তারা গিয়ে সেখানে প্রথমে ইট-পাটকেল, পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। হামলাকারীদের প্রায় সবার হাতে লাঠিসোঁটা, দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। এ সময় প্রাথমিকভাবে কারারক্ষীরা তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কিন্তু একপর্যায়ে কারারক্ষীরা পিছু হটে। তখন হামলাকারীরা কারাগারের দুই দিকের ফটক অনেকটা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় হামলায় চার কারারক্ষী গুরুতর আহত হয়। পরে কারারক্ষীরা নিরুপায় হয়ে জেলখানার ভেতরে ঢুকে নিজেদের রক্ষা করেন। জেল কোড অনুযায়ী, গুলি করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা মূল কারাগারের ভেতরে ঢুকে সেলগুলো শাবল ও লোহার জিনিসপত্র দিয়ে ভেঙে কয়েদিদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। কিছু কারারক্ষীর কাছ থেকে চাবি নিয়েও সেলের তালা খোলা হয়। 

হামলা ও অগ্নিসংসোগে কারাগার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অফিস কক্ষ, কনডেমড সেল, রান্নাঘর, খোলা চত্বর সব জায়গায় তাণ্ডবের চিহ্ন। দরজা-জানালাগুলো ভেঙে গেছে, দেয়ালে দেয়ালে পোড়া চিহ্ন। এ ঘটনায় ৮ শতাধিক কয়েদি পালিয়ে গেছে।

তন্ময় সাহা/আরএআর