বাগেরহাটের রামপালে বিদেশি মুরগি পালন করে সফলতা পেয়েছেন ফয়সাল আহমেদ শুভ নামের এক শিক্ষার্থী। বর্তমানে বিদেশি মুরগির এই খামার থেকে বছরে ৬ লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন তিনি। ফয়সালের অনুপ্রেরণায় জেলা ও জেলার বাইরে অনেকেই বিদেশি মুরগি লালন-পালনে আগ্রহী হচ্ছেন। বেকার যুবকরা বিদেশি মুরগি পালনে এগিয়ে এলে বেকারত্ব দূর হবে বলে মনে করেন এই শিক্ষার্থী।

জানা যায়, ২০১৯ সালে বাবার কাছে থেকে ৩৪০০ টাকা নিয়ে শখের বসে ৪টি ইউরোপিয়ান সিল্কি মুরগি কিনে বসতবাড়িতে লালন-পালন শুরু করেন রামপাল উপজেলার মল্লিকের বেড় গ্রামের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ শুভ। কিছু দিনের মধ্যে তার মুরগিগুলো ডিম পারে এবং বাচ্চা দেয়। পরে অনলাইনে সিল্কি মুরগির বাচ্চা বিক্রি শুরু করেন ফয়সাল। সেই টাকা দিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে আরও নানা প্রজাতির বিদেশি মুরগি সংগ্রহ করতে থাকেন। শখের খামারের নাম দেন শুভ অ্যাগ্রো। এই মুরগি পালনই ফয়সালের আয়ের পথ খুলে দিয়েছে। উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রিও বাড়তে থাকে। অনলাইনে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অর্ডার আসতে শুরু করে ফয়সালের কাছে। বর্তমানে প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকার বেশি মুরগির বাচ্চা বিক্রি করেন তিনি। তার খামারে রয়েছে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো ইনকিউবেটর মেশিন।

বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির মুরগির ডিম থেকে ফোটানো বাচ্চা বিক্রি করেই মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় হয়। মুরগির পাশাপাশি জাপানের জাতীয় পাখি গ্রীন ফিজান্টে লালন-পালন শুরু করেছেন ফয়সাল। ফয়সালের খামার থেকে বাচ্চা নিয়ে অনেকেই বিদেশি মুরগির চাষ শুরু করেছে। নতুন করে কেউ শুরু করতে চাইলে তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন এই শিক্ষার্থী।

ফয়সালের খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে হারুন মীর নামের এক ব্যক্তির। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর যাবৎ এই খামারে কাজ করে আমার সংসার চলে।  

খামার দেখতে আসা রবিউল ইসলাম বলেন, আমি বিদেশি মুরগির খামার শুরু করতে চাই। তাই ফয়সাল ভাইয়ের খামার দেখতে এসেছি। অনেক প্রজাতির বিদেশি মুরগি দেখলাম। ভালো লেগেছে।

তরুণ উদ্যোক্তা ফয়সালের বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে থেকে মাত্র ৩ হাজার ৪০০ টাকা নিয়ে শুরু করেছিল। এখন এই ফার্ম থেকে বছরে শুভ আয় করছে ৬ লাখ টাকা। তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক বেকার যুবক বিদেশি মুরগির ফার্ম গড়ে তুলেছে।

তরুণ উদ্যোক্তা ফয়সাল আহমেদ শুভ বলেন, ইউটিউব দেখে ২০১৯ সালে চারটি ইউরোপিয়ান সিল্কি জাতের মুরগি কিনি। কিছুদিন পর মুরগিগুলো ডিম দিতে শুরু করলে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর একে একে ইউরোপিয়ান ব্রাহামা, সিল্কি, হামবার্গ, সিলবার, ব্রাহামা, কসোমা, ফাইটার, রিং নেকস, বাফ পলিশ, ক্যাপ ফ্রিজেলসহ অন্তত ২৫ প্রজাতির মুরগি সংগ্রহ করি।

তিনি আরও বলেন, বিদেশি এসব মুরগির ডিম বিক্রি না করে তা থেকে ইনকিউবেটরের সাহায্যে বাচ্চা উৎপাদন করে বিক্রি করি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অনলাইনে দেশের বিভিন্নস্থানে মুরগি বিক্রি করে বছরে আমার আয় হয় ৬ লাখ টাকার বেশি। এখন পর্যন্ত এই খামার থেকে বাগেরহাট, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের ৫৫টি জেলায় বিদেশি জাতের মুরগি বিক্রি করেছি। 

বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাহেব আলী  বলেন, ফয়সাল আহমেদ শুভর বিদেশি মুরগির খামারের কথা শুনেছি।সেখানে বিভিন্ন দেশের প্রায় ২৫ প্রজাতির বিদেশি মোরগ-মুরগি আছে। তার খামারের প্রতি জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সুদৃষ্টি রয়েছে। এমন তরুণ উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে করা হবে।

শেখ আবু তালেব/আরকে