কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূত্র ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ স্লোগান নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তার নিজহাতে লেখা একটি চিরকুট ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তার সেই চিরকুটে লেখা মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনা করেছেন বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও পঞ্চগড় ও নারায়ণগঞ্জে বই পুুড়িয়ে-নদীতে ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনেকে। 

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের বই ছিঁড়ে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার পরিবেশ ও শিক্ষাকর্মী মাহমুদুল ইসলাম মামুন। বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে উপজেলার বেরং নদীর সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ভিডিও করে বইটি ছিড়ে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে উত্তরের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এ যুবক।

মাহমুদুল ইসলাম মামুন বলেন, আপনার বই আমি অনেক পড়িয়েছি। অনেক কষ্টের টাকায় বই কিনে কিনে বই পড়াই। গ্রামে গ্রামে ঘুরে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে মানুষকে আপনার বই পড়িয়ে শুনিয়েছি। আজ থেকে আপনার বই আর পড়াব না, পড়াব না। তাই আপনার বই ছিড়ে ছিড়ে আজ নদীতে ফেলব। এটি আপনি দেখে নিয়েন। এটা আমাদের গ্রামগঞ্জ থেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি আপনার অনেক বই কিনে পড়িয়েছি। এই দেখুন আজ আপনাকে নদীতে ফেলে ভাসিয়ে দিলাম। আপনার বোদ্ধা আমাদের ছাত্র সমাজকে আমাদের অসাধুদের উসকে দেওয়ার মানুষের প্রয়োজন নেই।

মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি তার অনেক বই কিনেছি। যখনই তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বক্তব্য ঘিরে বিতর্কিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার অনেক বই অনেক প্রকাশক না ছাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। তখন আমিও দেশের উত্তরের প্রান্ত তেঁতুলিয়া থেকে এ প্রতিবাদ জানালাম। কারণ, তারা তো বুদ্ধিজীবী। আজকে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে। তিনি তো প্রধানমন্ত্রীর সাথে বসে আলোচনা করতে পারতেন। ৩০% কোটার জায়গা ১০% কমিয়ে আনলে কিংবা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলেও তো আজকের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন হতো না। কোনো শিক্ষার্থী মারা যেতো না। এ সমাধান হওয়া উচিত।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় লেখক জাফর ইকবালের লিখিত বেশ কয়েকটি বই পুড়িয়ে দিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এসময় জাফর ইকবালের উদ্দেশ্যে ‘আমরা নই রাজাকার, জাফর ইকবাল স্বৈরাচার, জাফর ইকবাল রাজাকার; আমরা নই রাজাকার; জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা। বুধবার দুপুরে চাষাঢ়া গোলচত্বরে সমবেত হয়ে সড়ক অবরোধ করেন তারা। এ সময় জাফর ইকবাল রচিত ‘রাশা, বুবুনের বাবা’ সহ ১৫-২০টি বই পুড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন তারা।

এ সময় নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজের  শিক্ষার্থী আফসানা বলেন, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আমরা রাস্তায় নেমেছি। কোটা সংস্কার না করা পর্যন্ত আমরা সড়কে থাকব ৷

তোলারাম কলেজের আবিদ বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনে বিভিন্ন জায়গায় হামলা হয়েছে ৷ অনেকের প্রাণ গেছে। এ আত্মত্যাগ আমরা বৃথা যেতে দেব না। সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাই সকলকে।’

প্রসঙ্গত, কোটা আন্দোলনকারীরা স্লোগানে নিজেদের রাজাকার দাবি করায় আর কখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাইবেন না বলে অতি সম্প্রতি একটি চিরকুট লিখে মন্তব্য করেছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

চিরকুটে তিনি আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের দেওয়া স্লোগানের সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আমি মনে হয় আর কোনোদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাইবো না, ছাত্র-ছাত্রীদের দেখলেই মনে হবে, এরাই হয়তো সেই রাজাকার।

তিনি আরও লিখেছেন, আর যে কয়দিন বেঁচে আছি, আমি কোনো রাজাকারের মুখ দেখতে চাই না। একটাই তো জীবন, সেই জীবনে আবার কেন নতুন করে রাজাকারদের দেখতে হবে?’

এসকে দোয়েল/শিপন সিকদার/আরকে