রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদের (২৪) একটি পোস্ট ফেসবুকের টাইমলাইনে ভেসে বেরাচ্ছে। ওই পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আদনান আবিরের মন্তব্য শেয়ার করেন আবু সাঈদ। সেখানে আদনানকে উদ্ধৃত করে লিখেছিলেন, ‘যদি আজ শহীদ হই, তবে আমার নিথর দেহটা রাজপথে ফেলে রাখবেন। ছাত্র সমাজ যখন বিজয় মিছিল নিয়ে রুমে ফিরবে, তখন আমাকেও বিজয়ী ঘোষণা করে দাফন করবেন৷ একজন পরাজিতের লাশ কখনো তার মা-বাবা গ্রহণ করবে না।’

সোমবার (১৫ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার দিয়ে এ ক্যাপশন জুড়ে দিয়েছিলেন তিনি। এই পোস্টের একদিন পর সত্যিই মারা গেলেন তিনি।

জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে রংপুর নগরীর পার্ক মোড়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সড়কে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগের সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষ বাধে।‌ এতে মিছিলের সামনে থেকে বুক পেতে দিলে পুলিশের ছোড়া গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ।

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে আবু সাঈদ। তিনি ছিলেন দারিদ্র্য পরিবারের অসহায় মা-বাবার একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সন্তান। প্রবল ইচ্ছাশক্তিতে নয় ভাই-বোনের মধ্যে লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। অভাবের সংসারে অন্য সন্তানরা লেখাপড়া করতে না পারলেও সাঈদ খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। পরে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে একই ফলাফল নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, মঙ্গলবার দুপুরে বেরোবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিছিলে অংশ নেন আবু সাঈদ। এই আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন তিনি। এ কারণে মিছিলের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত বিক্ষোভ মিছিলটি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে।

ওই ত্রিমুখী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। এ সময় শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে শতাধিকের বেশি টিয়ার সেল, রাবার বুলেট ও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে পুলিশ। সংঘর্ষে মিছিলের সামনে থেকে বুক পেতে দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ইউনুস আলী বলেন, এক শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এ ছাড়া আহত অবস্থায় আরও ১৫ জন হাসপাতালে এসেছে, তাদের চিকিৎসা চলছে।

এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দেয়। তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। অনেক পুলিশ সদস্য এতে আহত হয়েছে। একজন মারা গেছেন বলে শুনেছি। তিনি কীভাবে মারা গেছেন, তা বলতে পারছি না।

এদিকে, মঙ্গলবার মধ্যরাতে (১৭ জুলাই) পীরগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে পুলিশি নিরাপত্তায় আবু সাঈদের মরদেহ নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাতেই আবু সাঈদের মরদেহ দাফন করা হবে। এ নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/কেএ