নওগাঁয় কোটাবিরোধী আন্দোলনে বিক্ষোভ মিছিলে হামলা করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে মিছিলটি শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকা প্রদক্ষিণের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর এ হামলা চালানো হয়। যেখানে এসএস পাইপ হাতে প্রকাশ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পেটাতে দেখা যায় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আমানুজ্জামান সিউল ও তার অনুসারীদের।

এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ছিনিয়ে নিতেও দেখা যায়। উভয়পক্ষের মাঝে ধস্তাধস্তি চলে অন্তত ২০ মিনিট। এতে শহরের ব্যস্ততম সড়কে সৃষ্টি হয় যানজট। একপর্যায়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাব্বির রহমান রেজভী সেখানে উপস্থিত হয়ে দুই পক্ষকে রাস্তা থেকে সরে যেতে বাধ্য করেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আবারো একত্রিত হয়ে সারাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সংক্ষিপ্ত আকারে বিক্ষোভ মিছিল করেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের একাংশ।

এদিকে বিকেল সাড়ে ৫টায় নওগাঁর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শতাধিক শিক্ষার্থী পৃথক বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জেলা পরিষদ পার্কের ভেতরে। তবে তাদের মিছিল বের হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে পার্কে এসএস পাইপ হাতে প্রবেশ করেন ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মীরা। এ সময় ছাত্রলীগের মারমুখী ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হতে বাধ্য হয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এভাবে দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের শহরের প্রধান প্রধান সড়কে এসএস পাইপ হাতে মহড়া দিতে দেখা যায়।

বিকেলে নওগাঁ মেডিকেল কলেজের সামনে কথা হয় বাহিরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে। তাদের মধ্যে একজন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিম। তিনি বলেন, সংবিধানের ৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যে কোনো সমাবেশে নিরস্ত্রভাবে দাঁড়ানোর অধিকার আমাদের রয়েছে। এখানে নিরস্ত্রভাবে দাঁড়াতে এসেই আমাদের ওপর দফায় দফায় রড, এসএস পাইপ ও লাঠিসোঁটা দিয়ে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। পুলিশের সামনেই তারা প্রকাশ্যে এসএস পাইপ হাতে মহড়া দিয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ তাদের না আটকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আটকাতে আসছে পুলিশ। প্রশাসনের ভূমিকা এখানে প্রশ্নবিদ্ধ।

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লামিশা রহমান ও সুমাইয়া বলেন, জাহাঙ্গীরনগরের মতোই নওগাঁ মেডিকেল কলেজে ঢুকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পিটিয়েছে ছাত্রলীগ। হামলার সময় ছেলে-মেয়ে কোনো কিছুই তারা মানছেন না। আন্দোলনরত নারী শিক্ষার্থীদের সড়কে আটকে মারধর করছে ছাত্রলীগ। পুলিশের সামনে এসব কেন হচ্ছে? সেটার জবাব প্রশাসনকে দিতেই হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইশা আরিনা বলেন, আমরা কেউই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিপক্ষে না। নিজেদেরে যৌক্তিক আন্দোলনে মাঠে নেমেছি। কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানারে নয়। এরপরও ছাত্রলীগ আমাদেরকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে দফায় দফায় হামলা করছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাব্বির রহমান রেজভী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কেউই অংশ নেননি। ছাত্রদলের কিছু প্রেতাত্মা সাধারণ ছাত্রদের মাঝে ঢুকে এই আন্দোলনকে উসকে দিয়েছে। তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিহত করতেই মাঠে কাজ করছে ছাত্রলীগ। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কটূক্তি করে কেউ স্লোগান দিলে তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) গাজিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, শহরের মধ্যে পুলিশের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে এসএস পাইপ হাতে শোডাউন করার সুযোগ নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কেউই শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ বা মিছিলের জন্য অনুমতি নেয়নি। এখানে কোনো শিক্ষার্থীর ওপর ছাত্রলীগের হামলার তথ্য আমার জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।

আরমান হোসেন রুমন/আরএআর