‘ইপিজেডে আমার মোট ১৬০ শতাংশ জমি নিয়া গেছে কিন্তু কোনো অর্থ পরিশোধ করে নাই। আমাগো কোনো টাকা পয়সা না দিয়াই ভেকু আইছে মাটি কাটতে, তাই আমরা সবাই মিইলা (মিলে) বাধা দিছি। আমরা চাই আমাগো টাকা পরিশোধ করার পর কাজ শুরু করুক।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পটুয়াখালীর অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইপিজেড) নির্মাণের জন্য জমি দেওয়া এক জমির মালিক। 

অভিযোগ উঠেছে, ইপিজেড নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হলেও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির ন্যায্য মূল্য পরিশোধ করা হয়নি। এমন অভিযোগে অধিগ্রহণ করা জমিতে মাটি ভরাটের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয়রা। অর্থ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত কোনো কাজ করতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জমির মালিকরা।  

এদিকে জেলা প্রশাসন বলেছে, সমস্যা সমাধানে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নির্মাণ কাজ শুরুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড এলাকায় প্রস্তাবিত ইপিজেডের জন্য  জমি দিয়েছেন জয়নোব বেগম। তিনি বলেন, ইপিজেড-এ আমর বাপের জমিও বাজ্জে (পড়েছে) স্বামীর জমিও বাজ্জে। বাড়ি ঘর সব ইপিজেড-এ লইয়া গেছে। আমাগো সোজা কতা (কথা) আমরা টাকা না পাওয়া পর্যন্ত এইখানে কাজ করতে দিব না।

মো. মন্নান হাওলাদার নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আমার তিন ফসলা জমিসহ মোট ২ একর (৯৫ শতাংশ) জমি দিছি। ২০২১ সালে মূল্য নির্ধারণ করেছে এখন ২০২৪ সাল কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত কোনো টাকা পাই নাই। আমরা আমাদের টাকা না পাওয়া পর্যন্ত এখানে কোনো কাজ করতে দিমু না। তাতে আমাগো জীবন থাক আর না থাক।

আউলিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ইতোমধ্যে ১২শ মানুষের কাজপত্র যাচাই-বাছাই করে ফাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। অর্থ বিতরণ করার জন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে অধিগ্রহণের কাগজপত্র ইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হস্তান্তরের পর পর নির্মাণ কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। যারা টাকা পাচ্ছে না তাদের কাগজে ত্রুটি রয়েছে। 

পটুয়াখালী ইপিজেড নির্মাণ কাজের পিডি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, যেহেতু জেলা প্রশাসক আমাদের জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছে। নয় মাস আগে অধিগ্রহণের ২৬২ কোটি টাকা জেলা প্রশাসক অ্যাকাউন্টে প্রদান করা হয়েছে। আমরাও চাই সাধারণ মানুষ দ্রুত তাদের ক্ষতিপূরণের অর্থ পাক।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন মো. নূর কুতুবুল আলম বলেন, সমস্যা সমাধানে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবে। যেহেতু এখানে অর্থের বিষয় আছে সে ক্ষেত্রে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে অর্থ বিতরণ করা হবে।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২০২১ সালের ৮ আগস্ট পটুয়াখালী ইপিজেড নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) অনুকূলে জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়। এর ফলশ্রুতিতে ৪১০ দশমিক ৭৮ একর জমির ওপর পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পঁচাকোড়ালিয়া গ্রামে হচ্ছে এই ইপিজেড। এ ছাড়াও একই প্রকল্পের আওতায় কুয়াকাটায় ২ দশমিক ২৫ একর জমির ওপর স্থাপিত হচ্ছে ইনভেস্টরস ক্লাব।

এমএসএ