ঐতিহ্যবাহী গদখালী রেলস্টেশনটি পুনরায় চালুসহ ছয় দফা দাবিতে ট্রেন থামিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন এলাকাবাসী। রোববার (১৪ জুলাই) দুপুরে গদখালী রেলস্টেশন চত্বরে যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির আয়োজনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, গদখালী রেলস্টেশনটি ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। পরবর্তীতে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ যখন এক রাষ্ট্র ছিল তখনো এ স্টেশনটি চালু ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও এই রেললাইন এবং স্টেশন চালু ছিল। কিছুদিন যশোর বেনাপোল রেললাইনটি বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে আবার এই রেললাইন চালু হলেও গদখালী রেলস্টেশনটি চালু হয়নি। এ অঞ্চলের মানুষ গদখালী রেলস্টেশন থেকে বনগাঁও হয়ে কলকাতায় বাজার করতে যেত। এখন ট্রেন ভারত যাচ্ছে কিন্তু অনেক পুরাতন গদখালী রেলস্টেশন চালু হয়নি। গদখালী রেলস্টেশনটি চালুর জন্য আমরা এই অঞ্চল থেকে মন্ত্রণালয়সহ রেল কোম্পানিকে লিখিত জানিয়েছি কিন্তু সফলতা পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া এই স্টেশনটি চালু না হওয়ার পেছনে স্থানীয় কিছু কুচক্রীমহল কাজ করছে।

ফুল উৎপাদন সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, ঐতিহ্যবাহী গদখালী রেলস্টেশনটি চালু এলাকার জনগণের প্রাণের দাবি। কারণ, ফুলের রাজ্য হিসেবে খ্যাত এখানকার নানাজাতের ফুল ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে যায়। দেশের চাহিদার ৭০ শতাংশ ফুল এই অঞ্চল থেকে সরবরাহ হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেলবগি (ভাণ্ডার) ফুল ও সবজি পরিবহনের জন্য বরাদ্দ দিলে গদখালী স্টেশন থেকে ফুল ও সবজি সরবরাহ করা যাবে। এ ছাড়া ফুলের রাজ্যে ফুল পরিদর্শনে হাজার হাজার দর্শনার্থী দূরদূরান্ত বিশেষ করে খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ থেকে ট্রেনে যশোরের বেনাপোলে নেমে তারপর অন্যান্য পরিবহন ব্যবহার করে ১৫-২০ কিলোমিটার দূরত্ব যাতায়াত করতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একাংশ স্বল্প ভাড়ায় খুলনা, ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করার সুযোগ পাবে। হাজার হাজার জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সমাবেশে ৬ দফা দাবি জানিয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে রেল মন্ত্রণালয়ের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

দাবিগুলো হলো- গদখালী রেলস্টেশনটি পুনরায় চালু করতে হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে যশোর-বেনাপোল, দর্শনা-যশোর রুটে দুইটি এবং উত্তরবঙ্গে একটি নিয়মিত রেল চালু করতে হবে। ফুল ও সবজি পরিবহনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি রেলবগি (ভাণ্ডার) চালু করতে হবে। অবশ্যই ট্রেন ভাড়া বাস ভাড়ার থেকে কম রাখতে হবে এবং সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য আলাদা টিকিট প্রাপ্তির বিকল্প ব্যবস্থা থাকতে হবে। নিম্ন আয়ের জনগণের জন্য আলাদা ট্রেনের বগি ব্যবস্থা করতে হবে। দর্শনা থেকে খুলনা পর্যন্ত ডাবল রেললাইন।

সমাবেশে যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিমের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সংগ্রাম কমিটির সদস্যসচিব ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন, অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান হিরু, যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান ভিটু, ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রশিদুর রহমান রশীদ, গদখালী বাজার কমিটির পক্ষ থেকে ডাক্তার কামাল হোসেন, গদখালী স্বজন চক্রের নির্বাহী পরিচালক সুভাস ভক্ত বাবু, যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য সেলিম রেজা। সমাবেশ পরিচালনা করেন যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মীর ফারুক হোসেন। দাবি সমাবেশে স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন।

এ্যান্টনি দাস অপু/এমজেইউ