কমতে শুরু করেছে গাইবান্ধার সব নদ-নদীর পানি। এতে জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা— চার উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, এখনো ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও আগামী সপ্তাহ নাগাদ সব নদ নদীর পানি বিপদ সীমার সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় আসবে।

এদিকে পানিবন্দি হয়ে চার উপজেলায় গত ১২ দিন ধরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন প্রায় ৪০ হাজার পরিবারের মানুষ। এ অবস্থায় দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট। পানিতে তলিয়ে নষ্ট হওয়ায় উপক্রম প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট, বাদাম, মরিচ ও আমন বীজতলাসহ শাকসবজির ক্ষেত। 

বন্যায় জেলার চার উপজেলার ২৯ ইউনিয়নের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৮১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তলিয়ে যায় সাড়ে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমির পাট, আউশ ধান, শাক-সবজি ও আমন বীজতলা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যা দুর্গত বেশিরভাগ এলাকায় জেগেছে রাস্তা-ঘাট। পানি ওঠা বেশিরভাগ বাড়ি-ঘর ও উঠান থেকে নামে গেছে বন্যার পানি।‌পানি নেমে গেলেও অনেক বাড়ির আঙ্গিনায় কাদা রয়ে গেছে। ফলে তারা এখনো চলাফেরায় ভোগান্তিতে রয়েছেন।

চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলের কিছু বাড়ি-ঘরগুলোতে এখনো পানি রয়েছে। চরাঞ্চলে কৃষির ওপর নির্ভরশীল লোকজন চরম বেকায়দায় পড়েছেন। পানি নেমে গেলেও বন্যার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ায় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন দিনমজুর এই পরিবারগুলো। বন্যা কবলিত এসব মানুষের চেয়ে আছে সরকারি-বেসরকারিভাবে বরাদ্দ হওয়া ত্রাণের দিকে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট এলাকার মতিন মিয়া বলেন, টানা প্রায় দুই সপ্তাহ বন্যার পানিতে আটকা ছিলাম। কয়েকদিন ধরে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমলেও  আমাদের কষ্ট কমেনি। সরকারি বেসরকারিভাবে কোন ত্রাণও আমরা পাইনি।

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারী গ্রামের সবুজ মিয়া জানান, বন্যা শেষ হয়ে গেলে আমরা বেঁচে যাই। প্রতিবছর বর্ষা বন্যায় এত কষ্ট আমাদের আর ভালো লাগেনা।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর জামান রিংকু জানান, গত কয়েকদিন থেকে‌ পানি কমে বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে এখনো চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলের কিছু বাড়ি ঘরে পানি রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার প্রয়োজনীয় চাল রবাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও বন্যার্তদের কষ্ট লাঘবে প্রয়োজনীয় সহায়তা করে যাচ্ছে। যেভাবে পানি কমছে তাতে আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কথা জানান তিনি।

প্রতিনিধি/এসএমডব্লিউ