মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বালাশুর বাজারে প্রতিদিন বিকেলে বসে  মাছের মেলা। প্রতিদিনের মাছের যোগান আসে নদী, হাওর ও বিল থেকে।

পদ্মা নদী-আড়িয়ল বিলের কাছাকাছি অবস্থান হওয়ায় বাজারে একদিকে যেমন পদ্মা নদীর বাহারী ও আড়িয়ল বিলের দেশি মাছ পাওয়া যায়, তেমনি কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় অঞ্চল ও চাদঁপুর জেলার মেঘনা নদীর বাহারি মাছ পাওয়া যায় ওই বাজারে।  

প্রতিদিন বিকাল ৫টা বাজলেই মাছ ক্রেতা বিক্রেতার হাক ডাকে মুখরিত হয়ে উঠে ওই বাজার।  বিকেল ৫টার থেকে  রাত ১২টা পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনার রূপালী ইলিশ,  চিংড়ি, বালিয়া,  রুই, কাতল, আইড়, বোয়াল, সিলং, কাজলি, রিঠা, তারা বাইমসহ বিপুল মাছের সমাগম হয় এখানে।  এছাড়া আড়িয়ল বিলের শোল, গজার, কৈ, শিং, মাগুরসহ মিঠা পানির হরেক রকমের মাছের পাশাপাশি চাঁদপুর এলাকার মেঘনার ইলিশ ও কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরের বড় বড় দেশি মাছও মেলে এখানে।

সব মিলিয়ে বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বিকাল ৫ টার দিকে বসেন মাছ বিক্রেতারা। পদ্মার একেবারে ছোট ছোট মাছসহ নদী হাওড় ও বিলের বিপুল মাছের সমাগম হয় এই বাজারে।   মাত্র কয়েক ঘন্টায় ৫-৬ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয় বালাশুর বাজারে। ফরমালিনমুক্ত নদী ও বিলের তাজা মাছ নিতে দুরদুরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষের ভিড় জমে এখানে।

সরেজমিনে গিয়ে  দেখা গেছে, শ্রীনগর-দোহার আঞ্চলিক সড়কের রাঢ়িখাল ও ভাগ্যকুল দুই ইউনিয়নের মধ্যবর্তী সীমানায় বালাশুর চৌরাস্তা মোড়ে ওই মাছ বাজারটির অবস্থান। চৌরাস্ত সড়কের উত্তর পশ্চিম পাশে স্থাণীয় একটি মার্কেটের সামনে অল্প স্থান জুড়ে মাছ বাজারটির অবস্থান হলেও এখানে অল্প স্থানে ঢালা সাজিয়ে বসেন ২৫/৩০ জন মাছ বিক্রেতা। তবে বাহারি মাছের যোগান থাকায়  ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাকডাকে মাছের বাজারটি সরব থাকে।

ওই স্থানের পাশেই পদ্মা নদী । স্থানীয় মৎস্যজীবিরা পদ্মা নদী থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরে  বিকেল হলেই বিক্রির জন্য হাজির হন ওই বাজারে। বাজারটিতে স্থায়ীভাবে প্রায় ২০ জন মাছ বিক্রেতা থাকলেও এর বাইরে অন্যান্য জেলেরা  মাছ নিয়ে এসে এখানে বিক্রি করছেন। 

অন্যান্য বাজারে মাছ কেজি দরে বিক্রি হলেও এখানে বিক্রি হচ্ছে ভাগা ও পিছ হিসাবে।  নদীর তাজা মাঝারি সাইজের চিংড়ি বালিয়া মাছ ভাগা (পরিমাণ অনুসারে) বিকিকিনি হচ্ছে ১০০০-৪০০০ হাজার টাকায়। সেই হিসাব অনুযায়ী প্রতি কেজি চিংড়ি ও বালিয়া  মূল্য পড়ছে ৮০০-১৬০০ টাকা। এছাড়া পদ্মা বিভিন্ন  গুড়া মাছ ভাগা করে বিভিন্ন দামে বিক্রি হয় এই বাজারে। পাঙ্গাস, ইলিশ, বোয়াল, রিডা, আইড়সহ  অন্যান্য বড় মাছ পিছ হিসাবে এসব ছোট  মাছ বাগা হিসাবে বিক্রি হয়। 

মাছ বিক্রেতা চিত্ত বলেন, এই বাজারে পদ্মা নদী থেকে মাছ ধরে জেলেরা নিয়ে আসেন। আমরা তাদের কাছ হতে কিনে একদিকে পদ্মা নদীর মাছ বিক্রি করি অন্যদিকে আমরা পাশের লৌহজং উপজেলা মাওয়া হতে চাদঁপুর জেলার ইলিশ মাছ ও হাওড়ের বিভিন্ন বড় বড় মাছ এনে এখানে বিক্রি করি।

মাছ  বিক্রেতা জসিম বলেন, আমি চাদঁপুরের ইলিশ কিনে এনে এখানে বিক্রি করি। মাঝে মধ্যে পদ্মার ইলিশও ধরে নিয়ে আসেন জেলেরা। তবে পদ্মার চিংড়ি আর বালিয়া বেশি পাওয়া যায় এই বাজারে। ইলিশ মাছ ১৮০০-২০০০ হাজার টাকা কেজি এবং পদ্মার চিংড়ি ও বালিয়া ভাগা হিসাবে যা প্রায়  ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। 

মাছ কিনতে আসা ফজলুল হক বলেন, এখানে সব ধরনের মাছ পাওয়া যায়। দামেও তুলনামূলক কম তাই এখানে প্রায় মাছ কিনতে আসি। আরেক ক্রেতা সাগর বলেন, এখানে পদ্মার ভালো  মাছ পাওয়া যায় তবে দাম বেশি। মাছ ভালো হওয়াতে দাম বেশি দিয়ে কিনতে আসি। 

বাজারের মাছ ব্যাবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,  প্রতিদিন  লৌহজং উপজেলার মাওয়া মাছ  আড়ত ও জেলেদের কাছ থেকে মাছ সংগ্রহ করেন তারা।

ওই অঞ্চলের আন্যান্য হাট/বাজারের তুলনায় বালাশুর বাজারে কমদামে মাছ বিক্রি করা হয় বলে বিক্রেতাদের দাবী। বিকাল হতে বাজার বসলেও বিশেষ করে সন্ধ্যার পর এখানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ে। নানা প্রজাতির মাছের জন্য বালাশুর মাছের বাজারটি দিনদিন জমে উঠেছে।   দুরদুরান্ত থেকে প্রতিদিন মাছের জন্য অসংখ্য ক্রেতার আগমণ ঘটছে। প্রতিদিন গড়ে ৫/৬ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয় ওখানে।

প্রতিনিধি/ এসএমডব্লিউ