আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। এই জেলারই খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ কানসাট আম বাজার, এটি দেশের সর্ববৃহৎ এবং এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম আমের বাজার। কানসাট আম বাজার থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে শতাধিক ট্রাক আম। প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার আম কেনা-বেচা হয় কানসাটে। শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জই নয়, রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য এলাকার আড়তদাররা এখানে আসেন আম কিনতে। 

সরেজমিনে কানসাট আম বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পণ্যের ওজনের হিসেবে ৪০ কেজিতে মণ হলেও বাজারে আসা ব্যাপারী ও আড়তদাররা ৫২ থেকে ৫৬ কেজিতে এক মণ আম কিনছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমচাষিরা। 

আমচাষি ও বিক্রেতাদের অভিযোগ- সিন্ডিকেট করে তাদের কাছ থেকে বাড়তি ওজনে আম কেনা হচ্ছে। 

তবে ব্যাপারী ও আড়তদারেরা বলছেন, চাষিরা আমের সাইজ ভেদে বাছাই করে বাজারে না নিয়ে গড় হিসেব করে নেওয়ার কারণে বাড়তি ওজনে আম কিনছেন তারা। এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আরেওও চারটি বড় বাজারে ৫২ থেকে ৫৬ কেজিতে মণ ধরে আম কিনছেন ব্যাপারীরা।

উপজেলার চককীর্তি থেকে কানসাট বাজারে আম বিক্রি করতে আসা নাইমুল হক বলেন, ৪০ কেজিতে আমের মণ হওয়ার কথা থাকলেও ৫২ থেকে ৫৬ কেজিতে মণ নিচ্ছে। এর চেয়ে কমে দিতে চাইলে তারা আম কিনছেন না। তাদের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

ইব্রাহিম আলী নামে এক আমচাষি বলেন, আমরা আম বিক্রি করতে এসে এক ধরণের বেকায়দায় পড়ে গেছি। আগে ৪৫ কেজিতে মণ ছিল। এখন ৫২ থেকে ৫৩ কেজিতে নিচ্ছে মণ, তারপরও একটি করে আম এক্সটা নিচ্ছে। আমরা এক ধরনের বিপদে পড়ে গেছি এবং ক্ষতির মধ্যে আছি। এই বছর আমের উৎপদান কম হয়েছে। আমরা ওজনটা সুষ্ঠু চাই। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

সিরাজুল ইসলাম নামে আরেক চাষি বলেন, আম বিক্রি করছি কানসাটে বাজারে এসে। আমের ওজন চলছে ৫৪ থেকে ৫৫ কেজিতে মণ। কিন্তু এর আগে আমের ওজন ছিলো ৪৫ কেজিতে মণ। ওজন যেন ঠিক থাকে সেজন্য প্রশাসনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। স্বাভাবিক ওজনে আম বিক্রি করতে পারলে আমাদের আমচাষিদের জন্য খুব ভালো হবে।

তবে আব্দুল লতিফ নামে এক ব্যাপারী বলেন, আমচাষিরা বাগান থেকে সব ধরনের আম একসঙ্গে নিয়ে আসেন। তারা বাছাই করে ছোট, মাঝারী ও বড় আম আলাদা করেন না। তাই আমরা যদি আম বাছাই করে কিনি তবে ৫২ কেজিতে মণ হিসেবে নিই। আর যদি বাছাই করে আম না কিনি তাহলে ৫৩ বা ৫৪ কেজিতে সব সাইজের আম একসঙ্গে নিয়ে নিই। তারপর মোকামে গিয়ে আমরা তিন পদের (ছোট, বড়, মাঝারি) আম আলাদা করে বিক্রি করি। 

মঈন আলী নামে আরেক আমের আড়তদার বলেন, কানসাট আম বাজারে ৫২ কেজিতে মণ নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ভোলাহাট আম বাজারে ৫৫-৫৬ কেজি মণে আম নেওয়া হচ্ছে। কারণ অন্য বাজারে বেশি কেজি মণে আম কিনতে পারলে আমাদের বাজারে ব্যাপারী কম আসবে। তাই আমরা চাই আমাদের কানসাট আম বাজারটি টিকে থাক। কানসাট বাজারের চাষিরা সবাই ভালো আছে এবং আমরাও ভালো আছি।

কানসাট আম আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু বলেন, আমের ওজন নিয়ে এখানে একটি জটিলতা রয়েছে। গত ২০১৫ সাল থেকে আমের ওজন নিয়ে আমরা একটি বিভ্রান্তিকর অবস্থায় রয়েছি। পূর্ব পুরুষদের আমল থেকে দেখে আসছি ৪৫ কেজিতে আমের মণ, ৫ কেজি আম ধলতা (বেশি) দেওয়া হয়। কারণ  আম একটি পচনশীল পণ্য। তাছাড়া কানসাট বাজারের আম বিভিন্ন জেলায় পৌঁছাতে ২-৩ দিন সময় লাগে। এই কারণে আম নষ্ট হয়, পচে যায় অথবা শুকিয়ে যায়। যার কারণে ৫ কেজি আম চাষিরা বেশি দিয়ে থাকেন। কিন্ত গত ৫ বছর থেকে দেখে আসছি শুধু কানসাট বাজারই নয়, এই জেলার আরও চারটি বাজার যেমন, ভোলাহাট, রহনপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ কাঁচা বাজারে আমের ওজন নিয়ে জটিলতা চলছে। তার প্রেক্ষিতে প্রশাসনের মাধ্যমে আমরা চারটি বাজার একত্রে বসেছিলাম এবং আমের ওজন নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্ত সেই সিদ্ধান্তে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। 

তিনি বলেন, আমাদের জেলা প্রশাসকের কাছে অনুরোধ, তিনি চাইলে আমের ওজনটা চাঁপাইনববাগঞ্জের সব আম বাজারে এক রাখতে পারেন। প্রশাসন হস্তক্ষেপ না করলে এই বাজারে আমের ওজন ঠিক হবে বলে আমি মনে করি না। তাই প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি এবং আমের ওজন ৪০ কেজিতে মণ হলে সেটাকেই আমরা স্বাগত জানাব।

এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আফতাবুজ্জামান-আল-ইমরান বলেন, আমি এই উপজেলায় নতুন জয়েন করেছি। এই বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি এই বিষয়টি বিস্তারিত জেনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

আরএআর