নাটোরের গুরুদাসপুরে ৩৫ বছর ইমামতি শেষে মসজিদের ইমামকে ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে জাঁকজমকপূর্ণ বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। 

শুক্রবার (১২ জুলাই) উপজেলার চাঁচকৈড় কাঁচারিপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. মোতালেব হোসেনের সম্মানে এ আয়োজন করা হয়। 

এদিকে ইমামের বিদায়বেলায় উপস্থিত মুসল্লিরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এমন সংবর্ধনা পেয়ে আবেগ আপ্লুত ইমাম সবার জন্য দোয়া করেছেন। 

ইমাম মাওলানা মো. মোতালেব হোসেন উপজেলার ধারাবাড়িষা ইউনিয়নের চলনালী গ্রামের বাসিন্দা। 

এলাকাবাসী জানান, ১৯৮৯ সাল থেকে মাওলানা মো. মোতালেব হোসেন মসজিদটিতে ইমামতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দীর্ঘ ৩৫ বছরে তার দায়িত্বের সময়ে মসজিদটির প্রায় সকল উন্নয়ন কাজ হয়েছে। ইমাম মোতালেব হোসেনের বর্তমান বয়স ৭৫ বছর। নিজে থেকে ইমামের দায়িত্ব পালন থেকে অব্যাহতি চাওয়ায় এলাকাবাসী তার সম্মানে সংবর্ধনা দেন। জুম্মার নামাজের পর এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ইমামের হাতে নগদ ১ লক্ষ টাকা তুলে দেওয়া হয়। 

ইমামের বিদায় সংবর্ধনার দিনটিকে ঘিরে সকাল থেকেই মহল্লায় নানা আয়োজনে ব্যস্ত থাকেন এলাকাবাসী। সাজানো হয় ঘোরার গাড়ি। আয়োজন করা হয় প্রায় এক হাজার মুসল্লির খাবারের। দুপুরে জুম্মার নামাজের পর জামে মসজিদের ৭৫ বছর বয়সী ইমামকে হাত ধরে ঘোড়ার গাড়িতে তুলেন এলাকাবাসী। ঘোড়ার গাড়ির সামনে-পেছনে শতাধিক মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে ১০ কিলোমিটার দূরে চলনালী গ্রামে ইমামের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসেন এলাকাবাসী। 

কাঁচারিপাড়া জামে মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ মো. আলমগীর শেখ বলেন, ইমাম সাহেব আমাদের বিগত ৩৫ বছর যাবৎ নামাজ ও দীনের আলোচনার মাধ্যমে জ্ঞান দিয়ে এসেছেন। এলাকাবাসী তার পরামর্শ নিয়ে কাজকর্ম করতেন। তিনি ছিলেন সবার অভিভাবকের মতো। আমরা শুধু চেয়েছি তার বিদায় বেলাটা স্মরণীয় করে রাখতে। গুরুদাসপুরে এমন আয়োজনের মধ্য দিয়ে ইমামের বিদায় সংবর্ধনা এটাই প্রথম হচ্ছে। আমরা চাই প্রত্যেকটি মসজিদের ইমামের বিদায়টা সম্মানজনক হোক।

মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. আমজাদ হোসেন বলেন ইমাম সমাজের নেতা। সেই ইমামদের প্রাপ্য সম্মান অনেকসময় তেমনভাবে দেওয়া হয়না। এলাকাবাসীর উদ্যোগে ইমামকে যে আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিদায় দিয়েছেন তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এমন উদ্যোগ প্রতিটি এলাকার মুসল্লিরা গ্রহণ করুক।

বিদায়ী ইমাম মাওলানা মোতালেব হোসেন জানান, ১৯৮৯ সালে এই মসজিদে ইমাম হিসাবে যোগদান করেন। ৩৫ বছর যাবৎ ইমামতি করার সময় এই মহল্লার সব মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন তিনি। সুখে-দুঃখে সব সময় গ্রামবাসীর পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন।

তিনি বলেন, বিদায় বেলায় আমাকে এতো সম্মান দেওয়ায় আমি মুগ্ধ ও আনন্দিত। সব ইমামের বিদায়-ই সম্মানজনক হোক।

গোলাম রাব্বানী/এমএসএ