মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দিঘীরপাড় বাজারে ফের ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিন অল্প অল্প ভাঙন চললেও গতকাল একদিনেই ওই বাজারের ৭টি দোকান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। দুটি দোকানের আংশিক ভেঙে গেছে, হুমকির মুখে পড়েছে আরও ১০ দোকান।

আজ সকালে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে উজান থেকে নেমে আসার ঢলের পানিতে পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত বইছে। স্রোতে বাজার লাগোয়া নদীর পাড়ে ফেলা বালুর বস্তা ধসে গিয়ে ভাঙন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পুরো বাজারটিই ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে। বাজারঘাটের পশ্চিম পাশ থেকে পূর্ব দিকের ১০০ মিটার এলাকায় ভাঙন চলছে, যা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ইতিমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে বাজারের কামারপট্টির সাতটি দোকান। ভাঙন অব্যাহত থাকায় ওই কামারপট্টি ও তার পাশের অংশের বেশ কিছু দোকান হুমকির মুখে পড়েছে। দোকানগুলো থেকে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তবে সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে সে কাজেও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। 

স্থানীয় লোকজন ও ওই বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়— দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড় ইউনিয়নসহ, পাশের কামারখাড়া, হাসাইল ও পাঁচগাও ইউনিয়নে ভাঙন চলছে। ভাঙনে দিঘীরপাড় ও হাসাইল ইউনিয়নের ৯০ ভাগ ভূমি ইতিমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

গত ৫ বছরের ভাঙনে দিঘীরপাড় ইউনিয়নের দক্ষিণ মূলচর, মিতারা, কান্দাপাড়া, হাইয়ারপারের কয়েক শ বাড়িঘর, মসজিদ,আবাদি জমি বিলীন হয়েছে। দীঘির পাড় বাজারটিরও অন্তত ২০০ মিটার নদীতে বিলীন হয়েছে। তিন বছর আগে ভাঙন তীব্র ছিল। সে সময় বাজারের পাশ দিয়ে জিও ব্যাগও ফেলা হয়। এরপর ভাঙন বন্ধ করতে ব্লক দিয়ে স্থায়ী বেড়িবাঁধের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। চলতি বছরে বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও দৃশ্যমান কোনো কাজ শুরু হয়নি। 

বিগত ১৫ দিন যাবত মুন্সীগঞ্জ ও তার আশেপাশের এলাকায় বর্ষার পানি বেড়েই চলছে। নদীতেও তীব্র স্রোত বইছে। ফলে দিঘীরপাড় বাজারের পাশে ফেলা জিও ব্যাগ সরে গিয়ে কামারপট্টি এলাকার যোগেশ মন্ডল ,গৌতম মণ্ডল, দিলিপ মণ্ডল, অনিল মণ্ডল, কালু মণ্ডল, সুনীল মণ্ডলদের দোকান বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া নজির হালদার নামের‌ ব্যবসায়ীর ছয়টি, স্বপন মন্ডল, আলমেছ ব্যাপারী ও ওলি ব্যপারীদের দুটি দোকানের আংশিক বিলীন হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পদ্মার ভাঙন রোধে ২০২২ সালের মে মাসে লৌহজং উপজেলার খড়িয়া থেকে টঙ্গিবাড়ীর দীঘিরপাড় বাজার পর্যন্ত পদ্মার বাঁ তীরের ৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার অংশে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৪৪৬ কোটি টাকা। কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কয়েকটি ভাগে এ বাঁধ নির্মাণের কাজের দায়িত্ব পায়। তাদের মধ্যে সিগমা ইঞ্জিনিয়ারিংকে দীঘিরপাড় অংশের দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা।  

ব্যবসায়ী স্বপন মন্ডল বলেন, দুইদিন কাজ করলে ঠিকাদার ১৫ দিন কাজ করে না। তারা যদি ঠিক মতো কাজ করতো তবে আমাদের এই অবস্থা হতো না। আমরা হুমকির মুখে আছি। যে কোনো মুহূর্তে আমাদের দোকান-ঘর ভেঙে যেতে পারে। 

কামার যোগেশ মন্ডল বলেন, গতকাল সকালে এসে দোকান ঘরটি কোনোরকম সরাতে পেরেছি। এখন অন্যের দোকানে বসে কাজ করছি। বাঁধটা যদি ঠিকমতো দিতো তাহলে আমাদের এই দোকান ভাঙতো না। তারা কাজ করেছে গাফিলতি করে। গাফিলতি করে কাজ করার কারণে আমাদের আজ এই অবস্থা। 

এ বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঠিকাদারের অংশে স্থায়ীবাঁধ নির্মাণ কাজ করার কথা থাকলেও এখনও কোথাও একটি ব্লকও ফেলা হয়নি নদীতে। 

এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপক মোশাওয়ার হোসেন বলেন, ব্লক তৈরির জন্য যে পরিমাণ জায়গা দরকার ছিল আমরা সময় মতো সেই জায়গা পায়নি। এ জন্য করতে পারিনি। জায়গা ভাড়া নিয়েছি। ব্লক তৈরির কাজ চলছে। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছি। সে সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করা হবে।

মুন্সীগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, বাঁধের স্থায়ী কাজের সময় বাড়ানো হয়নি। তিনি বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজের সময় বাড়াতে আবেদন করেছে। যেহেতু বর্ষাকাল,পানি না কমা পর্যন্ত  ব্লক ফেলা যাবে না। সে জন্য প্রকল্পের সময় বাড়ানো হতে পারে। 

ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার কার্যক্রম চলছে।

ব.ম শামীম/এনএফ