সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৭ জনের একজন প্রতিষ্ঠানটির অফিস সহায়ক মো. সাজেদুল ইসলাম (৪১)। তিনি নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মৃত সামছুল আলমের ছেলে। তবে গ্রামের লোকজন তাকে তেমন একটা চেনেন না। অনেকেই তাকে পিএসসির বড় কর্মকর্তা বলে জানতেন।

বুধবার (১০ জুলাই) সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মধ্য চরবাটা গ্রামের রবির দোকানের পাশে তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, বাড়িতে একটা টিনশেড ঘর ও বাড়ির একটা বাউন্ডারি ওয়াল আছে। গ্রামের বাড়িতে খুব একটা আসেন না সাজেদুল ইসলাম। মা ও স্ত্রী সন্তান নিয়ে রাজধানীর মতিঝিল এলাকার এজিবি কলোনীর কোয়ার্টারে তার বসবাস। তবে বিশাল জায়গা নিয়ে তার বাড়ি তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল। সে অনুযায়ী তৈরি করছিলেন সীমানা প্রাচীর। বাড়িটি তার মামা ছেরাজুল হক দেখাশোনা করছেন।

আবদুল বারী বাবলু নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাজেদুলরা চার ভাই-বোন। সবার জন্মস্থান ঢাকায়। তাদের সবার পড়াশোনাও ঢাকায়। তার বাবা চাকরির কারণে ঢাকায় থাকতেন। তার বোন মুন্নিকে সিলেট বিয়ে দিয়েছেন। মুন্নি ও তার স্বামী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নন ক্যাডারে চাকরি করেন। চাকরি পাওয়ার পর সাজেদুল এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছেন। সাজেদুলের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সিদ্দিক আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাজেদুল ইসলাম এলাকার মানুষের কাছে দানশীল হিসেবে পরিচিত। উনার বোন প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হতে পারলও কিছু দিন আগে উনার বোন ও ভগ্নিপতি একসঙ্গে বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ায় এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেন। উনিও অনেক লোককে চাকরি দিয়ে থাকেন শুনতাম। আমি ভাবতাম উনি পিএসসির বড় কর্মকর্তা, পরে শুনি উনি অফিস সহায়ক। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদে বাড়িতে গিয়ে সাজেদুল ইসলামের কর্মকাণ্ড শুনে অবাক হয়েছি। দেখি নিজের গাড়িতে চলাফেরা করেন। শুনলাম তার বউয়েরও নাকি ব্যক্তিগত গাড়ি আছে। নিজে কোটি টাকা কামাই করেন। ডুপ্লেক্স বাড়ি করার প্ল্যান করে বাউন্ডারির কাজ চলমান। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো এলাকার মানুষ তাদের টাকার গল্প করে কিন্তু সততার না। দেশ, সমাজে শিক্ষার চেয়ে টাকার মূল্য যে বেশি।

আরিফুর রহমান নামের আরেক স্থানীয় বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, পিএসসির প্রশ্ন ফাঁসকাণ্ডে জড়িত সাজেদুল এলাকায় অনিয়মিত। সে মা ও স্ত্রী সন্তান নিয়ে মতিঝিল এজিবি কলোনীর কোয়ার্টারে বসবাস করে। তারা ২ ভাই ও ২ বোন। তার বাবা ২০১৯ সালে মারা যান। তিনি পরিবহন পুলের গাড়ি চালক ছিলেন। ঢাকা থেকে সাজেদুল যখন বাড়িতে আসতেন, তখন একা একা চলাফেরা করতেন। কারও সঙ্গে তেমন মেলামেশা করতেন না।

সাজেদুলের মামা ছেরাজুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভাগিনারা দুই ভাই দুই বোন। তারা বাড়িতে তেমন একটা আসে না।  আসলেও সবার সাথে মেশে না। দোকানপাটেও কম যায়। তাদের বাড়ি চরক্লার্ক ইউনিয়নে। এটা তার নানা বাড়ি। কোনো বাড়িতেই তাদের ঘর নেই। তার বাবা সামছুল আলম এই জায়গাটি কিনেছিলেন। মাত্র সীমানা প্রাচীর তোলা হচ্ছে। এখানে বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। সে তার বোন আর ভগ্নিপতির চাকরি হওয়ায় পরিচিতদের মিষ্টি খাইয়েছে। এর বেশি কিছু আমি জানি না।

চরবাটা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইব্রাহিম খলিল ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাজেদুল ইসলামের মূল বাড়ি চরক্লার্ক ইউনিয়নের আবদুর রব বাজারের পাশে। আমার ওয়ার্ডে তারা নতুন বাড়ির জন্য জায়গা কিনেছে। এটা তার নানার বাড়ির এলাকা। তার বাবা জীবিত থাকাকালীন তার মায়ের জন্য জমিটি কিনেছিলেন বলে জেনেছি। বর্তমানে বাড়ির কাজ ধরার পরিকল্পনা ছিল। সে অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছে। এর ভেতর  শুনলাম সে গ্রেপ্তার হয়েছে। 

হাসিব আল আমিন/আরএআর