সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ইচাইল গ্রামের দুই ভাই সাখাওয়াত হোসেন (৩৪) ও সাইম হোসেন (২০) গ্রেপ্তার হওয়ার পর এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে গত তিন বছর ধরে অভাবে দিন কাটানো এই দুই ভাইয়ের চলাফেরা ও জীবনযাপনে হঠাৎ বিলাসী ভাব দেখে এলাকাবাসীর মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। তবে সম্প্রতি গণমাধ্যমে তাদের ছবি দেখে ওই সন্দেহ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সাখাওয়াত ও সাইম উপজেলার ইচাইল গ্রামের ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি মো. সাহেদ আলীর ছেলে। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা হলে এসব তথ্য জানা গেছে।   

তবে ময়মনসিংহ নগরীতে ওয়েল্ডিং মিস্ত্রির কাজ করা বাবা সাহেদ আলী দাবি করেছেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তার ছেলেদের ফাঁসানো হচ্ছে। ৪০ বছর ধরে ওয়েল্ডিং মিস্ত্রির কাজ ছেলে-মেয়েদের বড় করেছি। গত কয়েক বছর ধরে আমার জমি বিক্রির টাকায় ছেলেরা ঢাকায় ফিল্টার পানির ব্যবসা করছে। 

ছেলেদের বিলাসী জীবনযাপন নিয়ে তিনি বলেন, গত দুই বছর আগে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ১১ লাখ টাকায় একটি প্রাইভেট কার কিনেছে। এছাড়াও ব্যবসার ওপর ছেলেদের কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ আছে। এটা দোষের কী?

গ্রামবাসী জানায়, প্রায় ১০ বছর আগে পরিবারে অভাব-অনটনে সাখাওয়াত ও সাইম গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে যায়। শুনেছি ঢাকায় পানির ব্যবসা করে। এখন তাদের অনেক টাকা। নিজের গাড়িতে বাড়িতে আসে। তাদের জীবনযাপনে এখন বিলাসী ভাবসাব আছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি সাহেদ আলীর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। চার ভাইবোনের মধ্যে সানজিদা একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। ছোট বোন সুমাইয়া নার্সিংয়ে লেখাপড়া করেন ময়মনসিংহ শহরে। অপর ভাইদের মধ্যে সাখাওয়াত ছোটবেলায় হাফেজিয়া মাদরাসায় লেখাপড়া করে গত কয়েক বছর ধরে ঢাকার মতিঝিলের ফিল্টার পানির ব্যবসা করতেন। সেখানেই থাকতেন ছোট ভাই সাইম।

সাখাওয়াতের গ্রামের বন্ধুরা জানান, সাখাওয়াত বিগত কয়েক বছর ধরে বিলাসী জীবনযাপন করছেন। এশিয়া মহাদেশসহ আমেরিকা, কানাডা ভ্রমণ করেছেন। ঢাকায় নির্মাণ করেছে ফ্ল্যাট বাড়ি। ময়মনসিংহ নগরীর বাইপাসে রয়েছে তার জমি। এক বছর আগে কিনেছেন প্রাইভেট কার, আছে ড্রাইভারও। সম্প্রতি এসব বিষয় এলাকায় প্রকাশ হওয়ার পরই মানুষের মাঝে সন্দেহ বাড়তে থাকে। 

সাখাওয়াতের ফুফাতো বোন আছিয়া বেগম বলেন, আগে তাদের পরিবারে অর্থের অভাব থাকলেও এখন তারা কষ্ট করে টাকা উপার্জন করছে বলে শুনেছি। এর বেশি আমার জানা নেই।

সাখাওয়াতের চাচি জমিলা খাতুন বলেন, বাড়িতে সাখাওয়াতদের কোনো সম্পত্তি নেই। পানির ব্যবসা করে তারা ঢাকায় থাকে। দুই বছর আগে সাখাওয়াত প্রাইভেট কার কিনেছে। শুনেছি ব্যবসার কাজে বিদেশেও যায়। আর বেশি কিছু আমাদের জানা নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলবাড়ীয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাদের গ্রামের বাড়ির অবস্থা জরাজীর্ণ। সম্প্রতি পত্রিকায় ছবি প্রকাশ হওয়ার পর তাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে আমাদের কাছে তাদের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য নেই।

আরএআর