টানা দশ বছর পর পানির লাইন পাচ্ছে বরিশাল বিসিকের কারখানাগুলো। ইতোমধ্যে বিসিক ৮০ শতাংশ এলাকায় পানির লাইন বসানো হয়েছে। দুটি সাবমার্সিবল পাম্প দিয়ে সার্বক্ষণিক ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে সরবারহ করা হবে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিসিকের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও নতুন সংকটে পড়েছে কারখানা মালিকরা। বিসিকের ড্রেন পরিচ্ছন্ন না করায় দেড় বছরেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মশা-মাছি-পোকা-মাকড়ের উৎপাত বেড়েছে বহু গুণ। অল্প বৃষ্টিতেই ড্রেন উপচে পানি ঢুকছে কারখানায়।

১৯৬১ সালে ১৩০ দশমিক ৬১ একর জমি নিয়ে কার্যক্রম শুরু করা বরিশাল বিসিকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পানির সংযোগ দেওয়া হলেও সংস্কারের অভাবে তা বন্ধ হয়ে যায় প্রায় ১০ বছর আগে। বিসিকে ৪৭০টি প্লটের মধ্যে ১৭৭ জন ব্যক্তির অনুকূলে ৩৭৭টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে উৎপাদনে আছে ১২৬টি শিল্প ইউনিট। এই কারখানাগুলো ১০০০ টাকা করে প্রায় দশ বছরই পানির বিল দিয়ে এসেছে বিসিক কর্তৃপক্ষকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি কারখানার ব্যবস্থাপক বলেন, আগে আমরা মাসে ৩শ টাকা করে পানির বিল বাবদ দিতাম। পরে সকল কারখানা মালিকরা এক হয়ে বিসিক অফিসকে জানালে কমিয়ে বছরে এক হাজার টাকা করে।

বেশ কয়েকটি কারখানায় ঘুরেও পাওয়া গেল পানির বিলের আদায় রশিদ। ২০১৮ সালে আসা বিসিক উন্নয়ন প্রকল্পের অনুকূলে পানির সংযোগের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। সেই প্রকল্পের আওতায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে সংযুক্ত করা হচ্ছে পানির লাইন।

একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক পলাশ বলেন, বিসিকে যত প্রতিষ্ঠান আছে সব প্রতিষ্ঠানে পানির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পানির ব্যবস্থা থেকে আমরা এতদিন বঞ্চিত ছিলাম। বর্তমানে শুনছি পানির লাইনের কাজ চলছে। কাজ চললেও পানি কবে পাব, তা জানি না। এজন্য কারখানার পক্ষ থেকে নিজেরা পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা করে নিয়েছি।

আরেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন আমরা পানির অভাব নিয়ে কাজ করেছি। উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানে পানির সংস্থান না থাকলে ওই প্রতিষ্ঠান যেমন এগিয়ে যেতে পারে না তেমনি উৎপাদন ব্যয়ও বাড়ে। সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছেও অভাবের কথা উত্থাপন করেছিলাম। এখন দেখছি পানির লাইন টেনেছে। পানি পেলে আমাদের ভালো হবে।

‘পানির লাইন পেলেও আমরা আরেক বিপদে পড়েছি ড্রেন নিয়ে। ড্রেনের পানি সরে না। বিভিন্ন স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলে আটকে আছে। ড্রেন ঠিকমত পরিস্কার করা হয়। না। এতে মশা, মাছি, পোকা, মাকড়েরর উৎপাত বেড়েছে। পুরো বিসিকের কারখানাগুলোতে এই উৎপাতে আমরা অতিষ্ঠ।’ যুক্ত করেন জাহাঙ্গীর হোসেন।

বরিশাল বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খান বলেন, ড্রেন পরিষ্কার না করায় অল্প বৃষ্টি হলেই ড্রেন উপচে পানি কারখানায়ও ঢুকে পড়ে। ড্রেনগুলো বিভিন্ন স্থান থেকে আটকে দেওয়া আছে। এজন্য বিসিকের পানির এই এলাকার বাইরে যেতে পারে না। ড্রেনের পানিগুলো অপসারণের জন্য পাশের খাল বা সিটি কর্পোরেশনের বড় নর্দমার সাথে যুক্ত করা হলে ড্রেনগুলোর পানি সরে যেত।

তিনি বলেন, কারখানাগুলো বিসিকের উদ‌্যোগে পানির সরবারহের লাইন পাচ্ছে এটা খুবই আনন্দের সংবাদ। আমি চাই যত দ্রুত সম্ভব পানির লাইন দেওয়া হোক। পাশাপাশি ড্রেনগুলো সচল করার দাবি জানাচ্ছি। প্রয়োজনে বিসিক কর্তৃপক্ষকে শিল্প মালিকরা সর্বাত্মক সহায়তা করব।

বরিশাল বিসিকের প্রকল্প পরিচালক জালিস মাহমুদ বলেন, ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পাইন লাইন স্থাপন কাজ চলছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী ১ মাসের মধ্যে প্রতিটি কারখানা পানি পাবে। বিসিকের পানির লাইনের সুবিধা হচ্ছে প্রয়োজন মত পানি উত্তোলন করে সরবারহ করা সম্ভব। এখানে পানির ট্যাংক আমাদের, উত্তোলন যন্ত্রও আমাদের। যত পরিমাণের দরকার আমরা সেই পরিমাণের পানির ব্যবস্থা করতে পারব।

বিসিক বরিশাল জেলা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বিসিক কার্যক্রম চালানোর সঙ্গে সঙ্গে কারখানাগুলোতে পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করাও আমাদের কাজ। কিন্তু পানির লাইনে সমস্যা হওয়ায় দীর্ঘদিন পানি সরবারহ ব্যবস্থা বন্ধ ছিল। আশার কথা পানির লাইনের কাজ শেষের পথে। দ্রুতই আমরা পানির লাইন দিতে পারব।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের সার্বিক বিষয়ে সেবা দেওয়াই বিসিকের মূল কাজ।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরকে