ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলাতেও যমুনা নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিসহ অসংখ্য স্থাপনা। যমুনার আগ্রাসন থেকে রেহাই পায়নি কবরস্থানও। আর এতে নদীর স্রােত ভেসে যাচ্ছে ওই কবরস্থানে দাফন করা মরদেহ। 

গত চারদিন ধরে যমুনার তীব্র স্রোতে উপজেলার ভূতের মোড় থেকে ময়নাল সরকারের কবরস্থান এলাকা পর্যন্ত ভাঙন শুরু হয়েছে। ফলে ভাঙনে ভেসে যাচ্ছে ওই কবরস্থানের মরদেহ। তবে ভাঙন রোধে নিরলসভাবে কাজ করা হচ্ছে বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তীব্র স্রোত। আর সেই স্রোতে শুরু হয় ভাঙন। ভাঙনে কবরস্থানের বেশ কিছু অংশ ভেঙে কয়েকটি মরদেহ ভেসে গেছে। এছাড়া পাঁচ থেকে ছয়টি মরদেহ স্বজনরা উদ্ধার করে অন্যস্থানে কবর দিয়েছেন। ভাঙন নিয়ন্ত্রণে জিও ব্যাগ ভর্তি বালির বস্তা ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সার্বিক বিষয়ে মনিটরিং করছে ও কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।

গত ৪ জুলাই থেকে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নের ১৮ হাজার পরিবারের প্রায় ৯০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। এছাড়া কাজিপুর উপজেলার খাসরাজবাড়ি, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিস, শাহজাদপুর উপজেলার হাটপাচিল, জালালপুর, কৈজুড়ী চৌহালী উপজেলার ভূতের মোড় এলাকায় নদীভাঙন দেখা দেয়। 

ময়নাল সরকারের কবরস্থান এলাকার কামরুল ইসলাম ও ওমারপুর এলাকার আব্দুল হাদি বলেন, চারদিন ধরে চৌহালী উপজেলার ভূতের মোড় থেকে ময়নাল সরকারের কবরস্থান পর্যন্ত তীব্র নদীভাঙন শুরু হয়। এতে কবরস্থানের কিছু জায়গা ভেঙে কয়েকটি মরদেহ নদীতে ভেসে গেছে।

তারা বলেন, নদীর স্রোতে ভাঙনে সবকিছু ভেসে যাচ্ছে। যারা ভাঙনের সময় কবরস্থানের পাশে ছিল, তারা কয়েকজনের মরদেহ নদী থেকে উদ্ধার করে। কিন্তু রাতের বেলায় কেউ থাকে না। তখন কত মরদেহ ভেসে গেছে কেউ জানে না।

চৌহালীর বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম মোল্লা বলেন, তীব্র স্রোতে এই এলাকার অনেক ঘরবাড়িই ভেঙে নদীতে চলে গেছে। সাথে কবরস্থানের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। আমি ভাঙন এলাকায় গিয়ে চার থেকে পাঁচটি মরদেহ ভাসতে দেখেছি। 

এ ব্যাপারে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুব হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, যমুনা নদীতে পানি বাড়ায় তীব্র স্রোতের কারণে কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, বিভিন্ন স্থাপনাসহ কবরস্থানের কিছু অংশ ভেঙে নদীতে চলে গেছে। ভেসে যাওয়া মরদেহ উদ্ধার করে অন্যত্র দাফন করা হয়েছে। তবে তারপরও রাতের আধারে কিছু মরদেহ ভেসে গেছে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা দ্রুত জিও ব্যাগ ভর্তি বালির বস্তা ফেলে ওই এলাকার ভাঙন বন্ধ করেছি। ওখানে আর ভাঙন না থাকলেও পাশের আরেকটি এলাকাতে আছে। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ওই এলাকা থেকে আগেই স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে উপজেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া ভাঙন কবলিতদের মাঝে নিয়মিত ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

শুভ কুমার ঘোষ/আরকে