দেড় বছর পর কিশোর জিহাদ হত্যার রহস্য উদঘাটন
ফরিদপুর সদর উপজেলার চরনশিপুর গ্রামের কিশোর জিহাদ (১৪) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন। বুধবার (১০ জুলাই) বেলা ১১টায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম জিহাদ হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন ও হত্যাকারীর পরিচয় প্রকাশ করেন।
নিহত জিহাদ শেখ ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার চরনসিপুর (নৈমুদ্দিন মোল্লাপাড়া) গ্রামের জসিম শেখের ছেলে। রাজবাড়ীর কালুখালীর হরিনবাড়িয়ার চরে তার নানাবাড়ি।
বিজ্ঞাপন
রাজবাড়ীর কালুখালী থানার গঙ্গানন্দপুর ঈদগাহ মাঠে বালাৎকার করে হত্যা করে ফেলে যায় হত্যাকারী। পুলিশ ওই হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে না পেরে মামলার তদন্ত করতে পিবিআইয়ের সহায়তা চাইলে দেড় বছরের তদন্তে জিহাদ হত্যার রহস্য উন্মোচন করে পিবিআই।
পিবিআই ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম জানান, জিহাদ শেখের মা সেলিনা বেগম সৌদি আরবে থাকতেন। কিশোর জিহাদ হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে তার মা বিদেশ থেকেই জিহাদের বাবা জসিমকে তালাক দেন। জিহাদ বিষয়টি জানতে পেরে ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার দিকে ফরিদপুর থেকে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার হরিণবাড়িয়া তার নানা বারেক শেখের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এর দুই দিন পর ৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জিহাদের দাদা লতিফ শেখ মোবাইল ফোনে জানতে পারেন তার নাতি জিহাদের মরদেহ কালুখালীর গঙ্গানন্দপুর ঈদগাহ মাঠে পাওয়া গেছে।লতিফ শেখ ঘটনাস্থলে গিয়ে জিহাদের মরদেহ শনাক্ত করে। কালুখালী থানা পুলিশ সুরতাহাল প্রস্তুত ও আলামত জব্দ করে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো। ময়নাতদন্তকালে চিকিৎসক জিহাদের পায়ুপথ হতে রেক্টাল সোয়াব ৪টি স্টিক ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সংরক্ষণ করেন। ওই দিনই জিহাদের দাদা লতিফ শেখ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে কালুখালী থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগটি আমলে নিয়ে কালুখালী থানা মামলাটি রেকর্ড করে। মামলার তদন্তভার পড়ে এসআই হাসানুর রহমানের ওপর। ওই সময় সিআইডির ফরেনসিক শাখা জিহাদের পায়ুপথ হতে রেক্টাল সোয়াব পরীক্ষা করে তাতে পুরুষের বীর্যের উপস্থিতি পায়। ঘটনার দিন থেকে ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজবাড়ী জেলা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে। পরে মামলার বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার মামলার তদন্তভার পিবিআই ফরিদপুরের ওপর ন্যাস্ত করে। এরপর পিবিআই ফরিদপুরের পরিদর্শক মো. জালাল উদ্দিন সরদারের নেতৃত্বে তদন্তে ওই কিশোরকে বলাৎকারপূর্বক হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয় তদন্ত দল।
তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআই ফরিদপুর দীর্ঘদিন মামলাটি তদন্ত করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটন করে। তদন্ত করতে গিয়ে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ঈদুল আজহার দিন সন্ধ্যা ৬টায় কালুখালী সরকারি কলেজের পরিত্যক্ত টিনশেড রুমের মধ্যে কালুখালী বোয়ালিয়া গ্রামের অন্তর বিশ্বাসকে (১০) বলাৎকার করার সময় সে চিৎকার করলে তাকে কোমড়ের বেল্ট গলায় পেঁচিয়ে হত্যা চেষ্টাকালে কলেজের গার্ড চিৎকার শুনে এগিয়ে আসলে স্থানীয়দের সহযোগিতায় শাকিল (১৬) নামে এক কিশোরকে আটক করে কালুখালী থানা পুলিশের কাছে দেওয়া হয়।এই ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু হয়। কালুখালী থানা পুলিশ শাকিলকে কোর্টে চালান করে। ওই মামলায় শাকিলকে গাজীপুরের কাশিমপুর কিশোর সংশোধনাগারে রাখা হয়।
মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পিবিআই সন্দেহভাজনভাবে ঘটনাস্থল সংলগ্ন হিরু মোল্লার ঘাট এলাকার মুদি দোকানদার সেলিম মন্ডলকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠালে আদালতের অনুমতিক্রমে সিআইডির ফরেনসিক শাখা ঢাকায় নিয়ে তার ডিএনএ নমুনা নেওয়া হয়। কিন্তু সিআইডির ফরেনসিক শাখায় সংরক্ষিত নমুনার সাথে সেলিম মন্ডলের ডিএনএ মিল পাওয়া যায়নি। পিবিআইয়ের ব্যাপক তদন্তকালে কালুখালী থেকে বলাৎকারের মামলায় কারাগারে থাকা শাকিলকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তারপর আদালতের অনুমতিক্রমে শাকিলের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও সিআইডির ফরেনসিক শাখায় সংরক্ষিত ডিএনএর পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সিআইডি ঢাকার ফরেনসিক শাখা ডিএনএ তুলনামূলক পরীক্ষা করে সংরক্ষিত ডিএনএর সাথে শাকিলের ডিএনএর মিল পাওয়া যায়। এতে তদন্ত দল ওই কিশোরকে বলাৎকার করে হত্যা করা হয়েছে বলে শতভাগ নিশ্চিত হয় পিবিআই টিম। বর্তমানে শাকিল গাজীপুর কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে।
পিবিআই পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, জিহাদ হত্যার মামলায় শাকিলকে একমাত্র আসামি করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিইআই ইন্সপেক্টর মো. জালাল উদ্দিন সরদারের মাধ্যমে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/জহির হোসেন/আরএআর