আবহাওয়াজনিত কারণে চুয়াডাঙ্গায় অধিকাংশ ঘরে ভাইরাসজনিত জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। তিন থেকে সাত দিন জ্বর-সর্দি-কাশির তীব্রতা থাকছে। জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বয়স্কের সংখ্যাই বেশি। ফলে চাপ বেড়েছে সদর হাসপাতালে। 

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই মেডিসিন ওয়ার্ডে তিল পরিমান জায়গা নেই। মেঝেতেও ঠাঁই মিলছে না রোগীর। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্সরা। শুধু জ্বরই নয়, কাশি, শ্বাসকষ্টের রোগীরাও আসছেন প্রতিনিয়ত। এছাড়া প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে শুধুমাত্র ৪০০-৫০০ রোগী জ্বর-কাশি, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন।

চিকিৎসকরা বলছেন, এটি ভাইরাসজনিত জ্বর। বৃষ্টির কারণে কিছুটা ঠান্ডা আবার বাইরে গরম, তাই এই সময় সাবধান থাকতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড সূত্রে জানা যায়, গত তিন দিনে অর্থাৎ ৭ জুলাই থেকে ৯ জুলাই বেলা ৩টা পর্যন্ত দুটি ওয়ার্ডে মোট ভর্তি হয়েছেন ৫৪৫ জন রোগী। এর মধ্যে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা ৪৬টি এবং কেবিন ৩টি। পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে বেডের সংখ্যা ৬৫টি এবং কেবিন ২টি। এর বিপরীতে গত তিনদিনে পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ২৬০ জন এবং মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ২৮৫ জন ভর্তি হয়েছেন। ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি আছেন এই দুই ওয়ার্ডে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই জ্বরে আক্রান্ত রোগী।

এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার দুই ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা যায়, মেঝেতে বিছানা পেতে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিল পরিমাণ জায়গা নেই। ৮০ শতাংশ রোগী জ্বরে আক্রান্ত। এর মধ্যে বয়োবৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশি। এছাড়া জ্বরের সঙ্গে কাশি, শ্বাসকষ্ট, হার্টসহ বিভিন্নজনিত রোগে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। একদিকে রোগীদের চাপ, অপরদিকে ভ্যাপসা গরমে রোগী ও স্বজনদের হাসফাঁস অবস্থা। এছাড়া চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসক।  

শিউলি বেগম নামের এক নারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন দিন যাবৎ জ্বরে আক্রান্ত আমার মাকে নিয়ে হাসপাতালে আছি। ওয়ার্ডে রোগীদের প্রচণ্ড চাপ। কোনো জায়গা নেই। এর আগে আমি কখনো এতো রোগীর চাপ দেখিনি এই ওয়ার্ডে।  

পারভিন আক্তার নামে অপর এক নারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, চারদিন আগে আমার শাশুড়ি ঠাণ্ড-জ্বর-শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়। অবস্থার অবনতি হলে ওই দিন রাতেই হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তার ভর্তি করিয়ে দেন। তবে রোগীদের চাপ বেশি থাকলেও চিকিৎসক-নার্সদের সেবা দেওয়ায় কোনো কমতি নেই। তাদেরকে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে এসে সেবা দিচ্ছেন।

কর্তব্যরত নার্সরা জানান, ওয়ার্ডে জ্বর-কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন। জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাটাই বেশি। ওয়ার্ডে অতিরিক্ত রোগীদের চাপ বেশি হলেও সেবা দিতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। আমরা সাধ্যমতো সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে অতিরিক্ত রোগীর চাপ। ধারণ ক্ষমতার থেকে প্রায় দ্বিগুণ রোগী আছে বর্তমানে। বেশিরভাগ রোগীই ভাইরাসজনিত জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন। বৃষ্টির কারণে কিছুটা ঠান্ডা আবার বাইরে গরম, আর এই আবহাওয়াজনিত কারণেই জ্বর হচ্ছে প্রায় মানুষের। এই সময়টাতে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন জ্বর-কাশি আক্রান্ত হয়েছে ৪০০-৫০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আফজালুল হক/আরকে