প্রায় দুই মাস ধরে দুই মেয়েকে নিয়ে যশোর শহরের জেল রোডে কুইন্স হাসপাতালে ভর্তি মাহমুদা খাতুন নামে এক রোগী। হাসপাতালের সাত তলায় ৭০৩ নাম্বার কেবিনে অবস্থান করছেন তারা। ভর্তির ফরমে ঠিকানা ব্যবহার করেছেন যশোর শহরতলীর বকচর এলাকা।

চলতি বছরের ১৬ মে ইনফেকশন জনিত জটিলতা নিয়ে মাহমুদাকে হাসপাতালটিতে ভর্তি করেন তার দুই মেয়ে। এরপর থেকে দীর্ঘদিন ধরে তিনি হাসপাতালের ওই কেবিনে অবস্থান করছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে যে সমস্যা নিয়ে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন সেটির সুচিকিৎসা হয়েছে। তিনি এখন পুরোপুরি সুস্থ। অথচ তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করছেন না। রোগীর স্বজনদের দাবি তাদের রোগীকে ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার দায়ভার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আড়াল করতে তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখানো হয়েছে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের কারণে কোনো সমাধান না হওয়ায় কুইন্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যশোর সিভিল সার্জন অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। 

গতকাল যশোর সিভিল সার্জন অফিসের প্রতিনিধি দল হাসপাতালটিতে যায়। দুই পক্ষের তথ্য প্রমাণ দেখেন। প্রথমে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলতে না চাইলেও পরবর্তীতে রোগীর স্বজনরা গণমাধ্যমে অভিযোগ তুলে ভুল চিকিৎসার দাবি করেন।

জানা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে শারীরিক নানা অসুস্থতা নিয়ে মাহমুদা খাতুন কুইন্স হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মাহবুব আলমের তত্বাবধানে চিকিৎসা নেন। বর্তমানে তিনি লিভার, হার্ট, ডায়াবেটিসসহ নানাবিধ জটিলতায় ভুগছেন। এর মধ্যে ১৭ মে রাতে তার একটি অপারেশন করা হয়। পরবর্তীতে তার ঘা শুকিয়ে গেলেও অজানা ভয়ে তিনি দুই মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে থেকে যান।

মাহমুদা খাতুনের বড় মেয়ে রাবেয়া বসরি ও ছোট মেয়ে ফাতেমা তুজ জোহরার অভিযোগ— তাদের মা মাহমুদা খাতুনের শরীরে অন্য সমস্যা থাকার পরও ডা. মাহবুব আলম তড়িঘড়ি করে অপারেশন করেছেন। অপারেশনের পর তাদের হাসপাতালে ভর্তি নিচ্ছিলো না। তারা অন্য চিকিৎসকের পরার্মশ নিয়েছেন। তাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন হার্ট, লিভার, ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে সে রোগীকে অপারেশন করা যায় না। এখন তারা তাদের মায়ের সাথে হওয়া ভুল চিকিৎসার খেসারত দিচ্ছেন। হাসপাতাল থেকে প্রতিনিয়ত তাদের বের হয়ে যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। এমনকি তাদের বিষয়টা মিডিয়াতে না প্রকাশ করা ও গোপনে হাসপাতাল ত্যাগ করার জন্য নগদ মোটা অংকের টাকারও প্রস্তাব দিয়েছে হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এই সব বিষয়ে কুইন্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষে আইটি অ্যাডমিন হাসান ইমান শিমুল জানান, তারা একটি ফোঁড়া অপারেশনের জন্য আসেন। এই বিষয়ে সাধারণত আউটডোরে চিকিৎসা করানো হয়। তারা তাদের পাচঁ তলা বাড়িতে রোগী নিয়ে উঠতে পারবে না তাই বলে হাসপাতালের একটি কেবিন বুক করেন। দীর্ঘ দিন তারা কেবিনে থাকছেন। তাদের রোগী যে সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন সে সমস্যা পুরোপুরি ঠিক হয়ে গেছে । তারপরও তারা কেবিন ছাড়ছেন না। হাসপাতালের বিল ,এমনকি ফার্মেসির ওষুধের বিলও পরিশোধ করছেন না। তার সাথে দুই মেয়ে থাকেন। তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক। প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টাই এক-একজন করে বের হয়ে যান। গভীর রাতে হাসপাতালে ফেরেন। তাদের কেবিনে কাউকে প্রবেশ করতে দেন না। এমনকি দায়িত্বরত নার্সদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। তাদের ছাড়পত্র দেওয়ার পরও তারা যাচ্ছেন না। 

তিনি আরও বলেন, কোন গতি না দেখে আমরা যশোর সিভিল সার্জন অফিসে লিখিত অভিযোগ করি। সিভিল র্সাজন অফিস থেকে লোক এসেছেন । রোগীর আনীত অভিযোগের বিষয়ে বলেন, তাদের স্পষ্ট ভাবে বলে দেওয়া হয়েছে যদি মনে করেন ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে আপনারা মামলা করতে পারেন।

এ বিষয়ে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. নাজমুস সাদিক বলেন, আমরা দুই পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে।

এ্যান্টনি দাস অপু/এনএফ