সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) ক্যাডার ও নন-ক্যাডারসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার প্রতিষ্ঠানটির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম বোতলা গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। বাবার মৃত্যুর পর অভারের সংসারে জীবিকার তাগিদে সৈয়দ আবেদ আলী গ্রাম ছেড়ে রাজধানী ঢাকায় গিয়ে কুলির কাজ করেছিলেন। পরে ব্যাচেলর বাসায় পরিচয় হওয়া এক বন্ধুর মাধ্যমে পিএসসির চেয়ারম্যানের গাড়িচালক হিসেবে চাকরি পেয়েছিলেন।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকালে মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম বোতলা গ্রামে গেলে সৈয়দ আবেদ আলীর ছোট ভাই সৈয়দ সাবেদ আলী ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য জানান। 

সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার (৮ জুলাই) পিএসসির দুজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী এবং তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামও রয়েছেন।

ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম বোতলা গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, বালিগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম বোতলা গ্রামের সৈয়দ আব্দুর রহমান ও জয়গুন নেছা দম্পতির মেজো ছেলে সৈয়দ আবেদ আলী। তারা তিন ভাই ও এক বোন। দুই ভাই কৃষি কাজ করেন। কৃষক বাবার মৃত্যুর পর গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আবেদ আলী মাত্র ৮ বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে রাজধানী ঢাকায় চলে যান। এরপর সেখানে কুলির কাজ শুরু করেন। পরে এক ব্যক্তির বুদ্ধিতে গাড়ি চালানো শিখে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণির সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি নেন বেসরকারি একটি কোম্পানিতে (বেক্সিমকো)। ১৯৯৭ সালের দিকে রাজধানী ঢাকার ইন্দিরা রোডের পশ্চিম রাজাবাজার এলাকার একটি ব্যাচেলর মেসে থাকতেন আবেদ আলী। ওই মেসেই আবেদ আলীর সঙ্গে পরিচয় হয় সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর এলাকার শাহিন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। শাহিনের মামা মেজবাহ চাকরি করতেন সচিবালয়ে। শাহিনের মাধ্যমেই পিএসসির চেয়ারম্যানের গাড়িচালক হিসেবে চাকরি হয় তার। 

তবে পিএসসির চেয়ারম্যানের গাড়িচালক হিসেবে চাকরি পাওয়ার আশায় ওই কোম্পানির চাকরি ছেড়ে প্রায় ৬ মাস বেকার ছিলেন আবেদ আলী। এ সময়ে আবেদ আলীর ছোট ভাই সাবেদ আলী খিলগাঁও এলাকার মেরাদিয়াতে চানাচুর বিক্রি করতেন। বেকার আবেদ আলী মাঝে মধ্যেই ভাই সাবেদ আলীর নিকট থেকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা নিতেন মেসের খরচের জন্য। এরপর আবেদ আলীর চাকরি হলে তিনি অল্প দিনেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠেন। তবে চাকরি পাওয়ার পর আবেদ আলী তার বড় ভাই জাবেদ আলী ও ছোট ভাই সাবেদ আলীর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেননি। দুই ভাই এখনো কৃষি কাজ করে গ্রামের বাড়িতে ভাঙা টিনের ঘরে থাকলেও তার রয়েছে তিন তলা বাড়ি। 

আবেদ আলীর ছোট ভাই সাবেদ আলী

আবেদ আলীর ছোট ভাই সাবেদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৯৯৭ সালের দিকে আমি মেরাদিয়াতে চানাচুর বিক্রি করতাম। আবেদ আলী থাকতো ইন্দিরা রোডে। সে বেকার ছিল। মাঝে মধ্যেই আমার থেকে মেসের খরচের জন্য ৩০০-৫০০ টাকা নিত। তবে শাহিন নামে এক বন্ধুর মাধ্যমে পিএসসিতে চাকরি হওয়ার পর ওই বছরই সে বিয়ে করে। বিয়ের পরে সে আমাদের পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি। এখনও তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

বিষয়টি নিয়ে বালিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আবেদ আলীরা পারিবারিকভাবে খুবই গরিব ছিল। তার পরিবার ১৯৮৮ সালে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রাপ্ত চাল, গম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। আবেদ আলীর সঙ্গে তার অন্যান্য ভাইদের পারিবারিক সম্পর্ক নেই বলে আমি জানি।

আরএআর