সারাদেশের ন্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জেও দুই দফা দাবিতে ৯ম দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর এই দুই দফা দাবিতে কর্মবিরতি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। এ সময় বক্তারা বিআরইবি’র অব্যবস্থাপনা, বৈষম্য, দুর্নীতির মাধ্যমে নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ, গ্রাহক ভোগান্তি, দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করাসহ আরও বেশ কিছু অভিযোগ তুলে ধরেন।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সারাদেশের ন্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের নয়াগোলা এলাকায় অবস্থিত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়ের সামনে ৯ম দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। তবে কর্মবিরতি পালন করলেও জরুরি বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও গ্রাহক সেবা সচল রাখা হয়েছে।

আন্দোলনকারীদের মাধ্যমে জানা যায়, সম্প্রতি এসব বৈষম্য নিয়ে স্মারকলিপি দেওয়ায় পবিসের ছয়জন সহকারী মহাব্যবস্থাপককে সাময়িক বরখাস্ত করাসহ শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান বৈষম্যগুলো দূর করে বেতন কাঠামো ও সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা বিআরইবির সঙ্গে সমানভাবে পরিপালন, সাপ্তাহিক ছুটি একদিনের পরিবর্তে দুইদিন এবং পদোন্নতি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে বিআরইবির সঙ্গে সমন্বয় চান তারা। এছাড়া বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড-বিআরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যকার বৈষম্য দূরীকরণসহ অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নের দুই দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১ জুলাই থেকে সারাদেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪০ হাজার জনবল নিয়ে এই কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে পবিস অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম প্রকৌশলী আমিনুল রসুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। এই স্লোগানকে সামনে রেখে ২০২১ সালে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্ভব করা হয়েছে। কিন্তু দেশে শতভাগ বিদ্যুৎ সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে বিআরইবি’র দুর্নীতি এবং নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ। আমরা দুর্নীতির কথা তাদেরকে ধরিয়ে দিলে বা নিম্নমানের মালামালের কথা বললেই এবং তাদেরকে সুদ দিতে অনীহা করলেই আমরা খারাপ। বিআরইবি’কে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সুদ দিতে দিতে আজ দেওলিয়ার পথে। ১৯৭১ সালে যেমন অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মুখর হয়েছে ঠিক তেমনি সারাদেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪০ হাজার জনবল আজ প্রতিবাদ মুখর। আমাদের মাত্র দুইটি দাবি; প্রথম দাবি হচ্ছে- বিআরইবি’র ন্যায় একই সার্ভিস কোড, আমরা ভিন্ন সার্ভিস কোড চাই না। তারা যে সার্ভিস কোডে থাকবে আমরাও সে সার্ভিস কোডে থাকব। 

আমাদের আরেকটি দাবি হচ্ছে- একই পদে বিভিন্ন রকম কর্মচারী নিযুক্ত। কাজ একটিই, কেউ লাইনম্যান গ্রেড-১, কেউ লাইন টেকনিশিয়ান, কেউ কাজ নাই মজুরি নাই আবার কেউ লাইন শ্রমিক। তাদের সবার কাজ কিন্তু একটাই। গ্রাহকের অভিযোগ নিরসন, সিস্টেমের জন্য কাজ। কিন্ত পদভেদে তারা বৈষম্যের শিকার। আর এই বৈষম্যের কারণে বিআরইবি’র কাছে আমরা প্রতিবাদমুখর। আমরা এইসব বৈষম্য চাই না। সরকারের বাজেট কোথায় থেকে আসবে আমরা জানি না, যেহেতু সরকারের রাজস্ব আদায়ের জন্য কাজ করছি, বাজেটেও ইনশাআল্লাহ বাস্তবায়ন হয়ে যাবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিলিং সহকারী তানিয়া খাতুন বলেন, আমরা এই চাকরিতে যোগদানের পূর্বে ভেবেছিলাম কাজ নাই মজুরি মানে হচ্ছে কাজ থাকলে আমাদের আসতে হবে আর কাজ না থাকলে আমাদের আসতে হবে না। কিন্তু এই চাকরিতে যোগদানের পর আমরা দেখতে পেলাম আসলেই আমাদের কাজ আছে কিন্তু মজুরি নাই। পাশাপাশি টেবিলে বসে সমপরিমাণ কাজ করে একজন সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে আর আমরা সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হব এটা হবে না। মাতৃত্বকালীন ছুটি যেটা একটা মেয়ের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়, সেই সময় আমাদের বিনা বেতনে ছুটি কাটাতে হবে। যেসময় আমাদের টাকা প্রয়োজন সেসময় আমাদের বেতন দেওয়া হবে না। এছাড়া যখন প্রিপেইড মিটার হবে তখন আমাদের চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হবে। তাহলে তখন আমরা শূন্য হাতে কোথায় যাব?

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম (আইটি) সালমান তারিক বলেন, পিডিবি ভেঙে যখন আরএবি হয় তখন বিআরইবি একেক করে সারাদেশে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো তৈরি করে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো মাঠপর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহে ভূমিকা রাখে। এখানে বিআরইবি সরাসরি কোনো কিছু করে না। তারা শুধু ঢাকায় বসে থেকে আমাদের জন্য মনগড়া সার্ভিস কোড বানিয়ে দিয়েছে। সেই সার্ভিস কোডের আন্ডারে আমাদের পরিচালনা করে, একথায় শাসন করে আমাদের। আমাদের কাজের ক্ষেত্রের মালামাল ক্রয় করার সময় সিন্ডিকেট করে দুই নম্বর মালামাল ক্রয় করে আমাদেরকে দেয়। নিম্নমানের মালামাল ও লোকবল শর্ট থাকার কারণে দ্বিগুণ, তিনগুণ পরিশ্রম করতে হয় আমাদের। আর এই কারণে বদনাম হয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির। কিন্তু এই বদনামের দায় আমাদের না, এই বদনামের দায় বিআরইবি’র।

এসময় আরও বক্তব্য রাখেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম (সদর) মো. ফিরোজ জামান, ডিজিএম (নাচোল) আব্দুর রহিম, এজিএম (ইএ্যান্ডসি) জুবায়ের আহমদ, এজিএম (ওএন্ডএম) শুভন কুমার মহন্ত, এজিএম কালীপদ সরকার, সোহরাব হোসেন রাজু, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার সোহেল রানা তরফদার, হাসান আলী মোল্লাসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

আশিক আলী/আরকে