টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট বিভাগে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির কারণে স্থগিত হওয়া উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। গত ৩০ জুনের পরিবর্তে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আবশ্যিক) বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে সিলেট বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

শিক্ষা বোর্ড-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যায়, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন রয়েছে বিভাগের চার জেলা। পুরো বিভাগের ৩০৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮২ হাজার ৭৯৫ পরীক্ষার্থী এবার এইচএসসি পরীক্ষা অংশগ্রহণ করবেন। এর মধ্যে ৩৩ হাজার ৫৯০ জন ছাত্র এবং ৪৯ হাজার ২০৫ জন ছাত্রী।

জেলার হিসেব অনুযায়ী- সিলেটে ৩৫ হাজার ৬২০, সুনামগঞ্জে ১৫ হাজার ৬৬৪, মৌলভীবাজারে ১৬ হাজার ৫০৮ ও হবিগঞ্জে ১৫ হাজার ৩ পরীক্ষার্থী আছেন। বিভাগের চার জেলায় মোট ৮৭টি পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে ৩৩টি, সুনামগঞ্জে ২২টি, মৌলভীবাজারে ১৪টি ও হবিগঞ্জে ১৮টি।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, কলেজের প্রবেশ পথে পানি রয়েছে। পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে রাস্তায় বালুর বস্তা দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি শ্রেণিকক্ষে পানি রয়েছে। তবে সেগুলোতে পরীক্ষার হল রাখা হয়নি।

চলমান বন্যা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হলেও দুশ্চিন্তায় আছেন পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। অভিভাবকরা বলছেন, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি থাকার কারণে ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারেনি। পরীক্ষায় কী আসবে, কী লিখবে তারা সবই অনিশ্চিত। এই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন সু-নজরে দেখেন।

এইচএসসি পরীক্ষার্থী এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক দিলারা বেগম জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। তারা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে পারেনি। আমার বাসায় ও বন্যার পানি ছিল। এখন যদিও অনেক জায়গায় পানি কমেছে তবে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময় যেন বিষয়টি বিবেচনায় রাখেন।

এদিকে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা ভ্যেনুতে পানি থাকায় স্থান বদল করে অন্যত্র নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সিলেট শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল বলেন, বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। কেন্দ্রের আশপাশে পানি থাকলেও কেন্দ্রের মধ্যে কোনো পানি নেই। যে কয়েকটি পরীক্ষা ভ্যেনুতে পানি রয়েছে সেগুলো বদল করে অন্য ভেন্যুতে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সার্বিক দিক বিবেচনা করে মঙ্গলবার থেকে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। যদি আর পরীক্ষা পেছানো হয় তাহলে দেখা যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় সিলেট অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবে না। ওই পরীক্ষাগুলোর সময় তো আর বদল করা যাবে না। আমরা ইতিমধ্যে সকল উপজেলার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরীক্ষা কেন্দ্রের সর্বশেষ পরিস্থিতি জেনেছি। যে কয়টি ভ্যেনুতে পানি রয়েছে সেগুলো বদলে অন্য স্থানে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ মে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বন্যা দেখা দেয়। ৮ জুনের পর বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। সবশেষ ১৭ জুন শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে সিলেটে দ্বিতীয় দফায় বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়। এতে সিলেট নগরীর ২৪টি ওয়ার্ডসহ ১৩টি উপজেলা ও সুনামগঞ্জের ১৩টি উপজেলা কমবেশি প্লাবিত হয়। এ অবস্থায় আন্ত:শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি এক বিজ্ঞপ্তিতে সিলেট বিভাগের এইচএসসি, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করে।

মাসুদ আহমদ রনি/আরকে