রংপুরের কাউনিয়ায় এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে গোপনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরোনো টিনের ঘর বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে প্রতিকার দাবি করেছেন।

ঘটনাটি কাউনিয়া উপজেলার পূর্ব নাজিরদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটেছে। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল রাজ্জাক লাল।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহিদুল হক বলেন, স্থানীয় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পূর্ব নাজিরদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের আগে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য আধা পাকা টিনশেডের শ্রেণিকক্ষ তৈরি করা হয়। নতুন ভবনের কাজ শেষ হওয়ায় টিনের তৈরি ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল রাজ্জাক লাল গোপনে এবং বিধি বহির্ভূতভাবে আধা পাকা ঘরটিসহ বেশ কিছু গাছ বিক্রি করে দেন। পরে জানাজানি হলে প্রধান শিক্ষক নিজেকে বাঁচাতে কিছু প্রভাবশালীর যোগসাজশে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়ের পুরোনো ঢেউটিন দিয়ে আধা পাকা ঘর প্রধান শিক্ষক বিক্রি করেছেন। এছাড়া বিদ্যালয় মাঠে ফলজ ও বনজ বেশ কিছু গাছ ছিল। সেগুলোও বিক্রি করা হয়েছে। কোনো দরপত্র আহ্বান ছাড়াই প্রধান শিক্ষক ঘর ও গাছগুলো বিক্রি করেছেন। যা সরকারি নিয়মের মধ্যে পড়ে না।

নজির হোসেন, আব্দুল কাদের, জহুরুল ইসলাম, মিজানসহ অন্তত ১০-১৫ জন জানান, শিশুদের লেখাপড়ার স্বার্থে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। নতুন ভবন নির্মাণ হওয়ার পর পুরোনো আধা পাকা টিনের ঘরটি দরপত্রের (টেন্ডার) মাধ্যমে বিক্রয় করার কথা ছিল। পরে জানা গেল, প্রধান শিক্ষক গোপনে বিদ্যালয়ের ঘর ও গাছ বিক্রি করেছেন। এটা তো অন্যায়।

তারা আরও জানান, সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পূর্ব নাজিরদহ গ্রামের বাসিন্দারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। আমরা অভিভাবক হিসেবে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করছি।

তবে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল রাজ্জাক লাল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। এটি একটি বিশেষ মহলের ষড়যন্ত্র। আমি কোনো অনিয়ম করিনি। বিদ্যালয়ের পুরোনো টিনের ঘরটি আমি বিক্রি করিনি। পূর্বের কমিটির সাবেক সভাপতি ঘর বিক্রি করে টাকা বিদ্যালয়ের জমি কেনার জন্য আমাকে দিয়েছেন। সেই জমির ওপর ওয়াসব্লক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বিষয়টি তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তাও জানে বলে দাবি করেন তিনি।

স্কুল এসএমসির সাবেক সভাপতি মেনাজ উদ্দিন বলেন, আমার ওপর প্রধান শিক্ষক মিথ্যা দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন। প্রধান শিক্ষক আমাকে জানিয়েছিল নতুন ভবনে লোহার গ্রিল লাগানোর জন্য পুরোনো ঘরটি বিক্রি করা দরকার। আমি তাকে বিদ্যালয়ের স্বার্থে দরপত্রের (টেন্ডার) মাধ্যমে ঘরটি বিক্রি করার পরামর্শ দিয়েছি। এরপর ঘর ও বিদ্যালয় মাঠের গাছ তিনি (প্রধান শিক্ষক) কীভাবে বিক্রি করেছেন, সেটা আমাকে জানানো হয়নি। তবে কিছুদিন আগে রেজুলেশন খাতায় আমার স্বাক্ষর নেওয়ায় জন্য উনি (প্রধান শিক্ষক) এসেছিলেন কিন্তু আমি কোনো স্বাক্ষর করিনি। 

এসএমসির বর্তমান সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, সম্প্রতি আমাকে বিদ্যালয়ের সভাপতি করা হয়েছে। এখনও কোনো সভা হয়নি। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের কী কী মালামাল আছে সেটা আমার জানা নেই। তবে লোকমুখে শোনা, বিদ্যালয়ের একটি পুরোনো ঘর বিক্রি করে জমি কেনা হয়েছে। সেই জমি নাকি এখনো রেজিস্ট্রি করা হয়নি।

কাউনিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা শায়লা জেসমিন সাঈদ বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তদন্তের নির্দেশনা এসেছে। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।

রংপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, গেজেট ঘোষণার পর বিদ্যালয়ের জমি, ভবন ও মালামাল সবকিছুর মালিক সরকার। সেখানে পরিত্যক্ত ঘর বা অন্য কোনো মালামাল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে দরপত্র (টেন্ডার) আহ্বান ছাড়া বিক্রি করা যাবে না। যদি কোনো শিক্ষক গোপনে বিদ্যালয়ের মালামাল বিক্রি করে থাকে, তদন্তে তা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরকে