সৈয়দ আবেদ আলী

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) ক্যাডার ও নন-ক্যাডারসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন। সেজন্য তিনি এলাকার মসজিদ, মন্দির, এতিমখানাসহ গরিবদের মাঝে মুক্ত হস্তে দান করতেন। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে পোস্টার, ফেস্টুনসহ প্রচার-প্রচারণার জন্য ব্যয় করেছেন লাখ লাখ টাকা।

সোমবার (৮ জুলাই) রাতে মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

গ্রেপ্তার সৈয়দ আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম বোতলা গ্রামের আব্দুর রহমান মীরের ছেলে।

সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার বিপিএসসির দুজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে বিপিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী এবং তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামও রয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সৈয়দ আবেদ আলী পেশায় একজন গাড়িচালক হলেও ডাসার উপজেলায় পরিচয় দিতেন রাজধানী ঢাকার একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে। বিপিএসসির প্রশ্নফাঁস নিয়ে বেসরকারি একটি টেলিভিশনে সংবাদ প্রকাশের আগে ডাসার উপজেলাবাসী জানতেন না আবেদ আলী একজন গাড়িচালক। এলাকায় তিনি ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম দুই কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করতেন। 

ডাসার থানাকে উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করার পর ভোটার তালিকা প্রণয়ন, সীমানা সংক্রান্ত জটিলতাসহ ইত্যাদি কারণে এখনো জানা যায়নি কবে হবে ডাসার উপজেলা নির্বাচন। কিন্তু ডাসারকে উপজেলা ঘোষণা করার পরপরই চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য আবেদ আলী শুরু করেন প্রচার-প্রচারণা। এলাকার গরিব-দুঃখী শ্রমিক শ্রেণির মানুষসহ স্থানীয় মসজিদ, মন্দির, এতিমখানা ও বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে দান করতেন লাখ লাখ টাকা। এক সময়ের গরিব আবেদ আলী নিজ জন্মস্থান পশ্চিম বোতলা গ্রামের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন নান্দনিক ডিজাইনের একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি। এছাড়াও বাড়ির সামনে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন দ্বিতল একটি মসজিদ। আবেদ আলী নিয়মিত নামাজ পড়তেন। প্রায় সময়ই তিনি ডাসার উপজেলার বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে নামাজ শেষে দান করতেন কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা। 

সর্বশেষ গত শুক্রবার তিনি ধুয়াসার জামে মসজিদে ১৭ হাজার টাকা নগদ দান করেছেন। এছাড়াও ঈদ, পূজা-পার্বণসহ বিভিন্ন আনন্দ উৎসবে গরিবদের নতুন পোষাকসহ দান করতেন নগদ টাকা। এভাবে মুক্ত হস্তে দান করতে থাকায় এলাকায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক পরিচিত হয়ে ওঠেন আবেদ আলী। তবে সম্প্রতি বিপিএসসির প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে আবেদ আলীর নাম জড়িয়ে পড়লে এলাকার মানুষ জানতে পারে তিনি আসলে পেশায় একজন গাড়িচালক। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে আবেদ আলীর গ্রেপ্তারের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ডাসার উপজেলাবাসীর মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

পশ্চিম বোতলা গ্রামের আব্দুল হাকিম নামে একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আবেদ আলী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করেছেন। চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য তিনি এলাকায় শিল্পপতি পরিচয় দিয়ে কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করতেন। দান করতেন মুক্ত হস্তে। আমরা জানতাম তিনি ঢাকার একজন ব্যবসায়ী। তিনি যে গাড়িচালক তা আমি ফেসবুকে জানতে পেরেছি। এমন মানুষ উপজেলা চেয়ারম্যান হলে আর রক্ষা পাওয়া যেত না।

বালিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আবেদ আলী গাড়িচালক হলেও এলাকায় পরিচয় দিতেন ব্যবসায়ী। দুই কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করতেন। তার ছেলেও চলত দামি গাড়িতে। চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে তিনি এলাকার মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান করতেন। সর্বশেষ গত জুমার দিনও এক মসজিদে তিনি দান করেছেন। তবে আবেদ আলী কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রচারণা করেননি। প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে পড়লে এলাকার মানুষ জানতে পারেন তিনি একজন গাড়িচালক।

সাইফ রুদাদ/আরএআর