আগরবাতি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করে নিজেই কারখানা গড়ে তুলেছেন নীলফামারীর সৈয়দপুরের গোলাহাট এলাকার মোহাম্মদ শাহাজাদা। বর্তমানে তার কারখানায় কাজ করছেন ২৫ জন নারী ও ৪ জন পুরুষ।

তার কারখানায় মূলত সুগন্ধি ছাড়া আগরবাতি তৈরি হয়। তার কাছ থেকে আগরবাতি কিনে সুগন্ধি যুক্ত করে নিজস্ব ব্র্যান্ডে বাজারজাত করে থাকেন বিভিন্ন কোম্পানি।

জানা যায়, কয়লার গুড়া, কাঠের ভুসি ও বিজলার ছালের পাউডার একসঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় মেশিনে। এরপর সামান্য পানি দেওয়ার পর কয়েক মিনিট অপেক্ষা করলেই তৈরি হবে পেস্ট। সেই পেস্ট ছোট ছোট মেশিনের পাত্রে রেখে আরেক পাশে কাঠের কাঠিতে ঢুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন রকমের আগরবাতি। বিভিন্ন রকমের আগরবাতি তৈরির পর শুকানো হয় রোদে। এরপর পাঠানো হয় কোম্পানিগুলোতে। সুগন্ধি যুক্ত করে এসব আগরবাতি বাজারজাত করে এসব কোম্পানি।

শুধু শাহাজাদাই নন তার মতো আরও অনেকেই সৈয়দপুরে গড়ে তুলেছেন আগরবাতির কারখানা। একসময় সৈয়দপুরের নিম্নআয়ের মানুষের উপার্জনের অন্যতম পথ ছিল বাড়িতে বাড়িতে আগরবাতির তৈরি করা। মহাজনরা আগরবাতি তৈরির উপকরণ বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিত। এসব উপকরণ নিয়ে বাড়ির আঙিনা বা দরজার সামনে একটি কাঠের পিঁড়িতে বসে আরেক পিড়ির ওপর হাত দিয়ে ঘষে আগরবাতি বানানো হত। সে সময় এখানে আগরবাতিতে সুগন্ধি যুক্ত করে নিজস্ব ব্র্যান্ডে বাজারজাতের কয়েকটি কারখানাও ছিল।

সময়ের পরিবর্তনে এই ব্যবসার প্রসার কিছুটা কমে গেলেও এখনও আগরবাতি তৈরিতে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করছেন সৈয়দপুরের নারীরা। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে এই শিল্পে। অনেকে স্থানীয়ভাবে ছোট ছোট মেশিন তৈরি করে সেটা দিয়েও আগরবাতি তৈরি করছেন। এতে প্রতিদিন জনপ্রতি আয় করছেন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।

নারী কারিগর আমেনা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আগরবাতি কারখানায় ৮ থেকে ৯ বছর ধরে কাজ করছি। এই কাজ করে যা টাকা পাই তা দিয়ে সংসারের কিছুটা অভাব দূর হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ দিতে পারতেছি। তাতে করে স্বামীর ওপর কিছুটা চাপ কমে।

দুলালী আক্তার নামে আরেক নারী কারিগর ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে আসার আগে বাড়ির কাজ করতাম, সংসারে অভাব ছিল। এখন কাজ করে যা পাচ্ছি তা সংসারের কাজে লাগাচ্ছি। এখানে কাজ করে অনেক ভালো আছি। যদিও আমাদের মজুরি কম তবু আমরা ভালো আছি।

আলী আগরবাড়ি কারখানার মালিক মোহাম্মদ শাহাজাদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়লার গুড়া, কাঠের ভুসি ও বিজলার ছালের পাউডার একসঙ্গে মিশিয়ে মেশিনের মাধ্যমে কাঠের কাঠিতে ঢুকিয়ে আগরবাতি তৈরি করা হয়। কাঠের কাঠিটা আমরা সংগ্রহ করি ঢাকা থেকে আর বাকি কাঁচামালগুলো সৈয়দপুরেই পাওয়া যায়। আগে হাত দিয়ে বানাইতাম এখন মেশিন দিয়ে বানাচ্ছি। আগরবাতি বানানোর পর আমরা ঢাকা, ময়মনসিংহসহ দেশে বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়ে দেই। তারপর তারা সুগন্ধি যুক্ত করে বাজারে বিক্রি করে।

এই শিল্পের কারখানা প্রতিষ্ঠায় আগ্রহীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে বিসিক। বিসিক নীলফামারী জেলা কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক চারু চন্দ্র বর্মন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা আমাদের বেশ খুশির বিষয় যে সৈয়দপুরে উদ্যোক্তারা আগর শিল্পের কাঁচামাল প্রস্তুত করে দেশের বিভিন্ন কোম্পানিতে সরবরাহ করছে। সৈয়দপুরের যেসব উদ্যোক্তা আগর শিল্প প্রসারে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তার ক্ষেত্রে বিসিক নীলফামারী জেলা কার্যালয় সব সময় সহযোগিতা করবে।

আগরবাতি সৈয়দপুর শহরে ক্ষুদ্র আয়ের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। প্রায় ৭০ বছর থেকে সৈয়দপুরে আগরবাতি তৈরির সঙ্গে ১০ থেকে ১২ হাজার নারী জড়িত থাকলেও বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন হাজারে।

শরিফুল ইসলাম/আরকে