মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে নারী ও শিশুসহ ৮৮ জন আহত হয়েছে। আহত সকলেই জেলা সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে আহতদের মধ্যে ৪৫ জনের জখম বেশি হয়েছে। হঠাৎ করেই বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যাও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে।

রোববার (৭ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফারজানা ইয়াসমিন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কুকুরের কামড়ে আক্রান্তদের অধিকাংশই মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার সেওতা, বেউথা, দাশড়া, মানরা ও বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকেও অনেকেই হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন। আক্রন্তদের মধ্যে ৪৫ জনের শরীরের ক্ষত বেশি থাকায় তাদের আরআইবি দেওয়া হয়েছে। তবে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল চিকিৎসা নিতে আসা সকল রোগীকেই টিকাদান করা হয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে সবাই বাড়ি ফিরে গেছেন।

বাসস্ট্যান্ড এলাকার ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, আজকে মানিকগঞ্জে বহু মানুষকে কুকুরে কামড় দিয়েছে। আমরা খুবই আতঙ্কে আছি। এখন রাস্তায় বের হতেই ভয় লাগছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

সেওতা এলাকার কবরস্থানের পরিচ্ছন্ন কর্মী ঘটু মিয়া বলেন, আমি বেলা ১০টার দিকে কবরস্থান পরিষ্কার করতে ছিলাম। এমন সময় একটি কুকুর এসে আমার পায়ে এবং হাতে কামড় দেয়। পরে দ্রুত হাসপাতালে আসি এবং টিকা নেই।

কুকুরের কামড়ের শিকার সালেহা বেগম বলেন, মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে সংসার চালাই। আজকে দুপুরের দিকে সেওতা এলাকায় এক বাড়িতে কাজ করতে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে একটি কুকুর এসে আমার পায়ে কামড় দিয়ে মাংস ছিড়ে নিয়ে যায়। পরে আশপাশের লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।

পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ বলেন, সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ২ থেকে ৩টি কুকুর আমার ওয়ার্ডের নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধসহ প্রায় ৪০ জনকে কামড় দিয়েছে। এছাড়া রাস্তা দিয়ে চলাচল করা মানুষদের অনেকেই কামড়িয়েছে। গ্রামের মানুষসহ পৌরসভা লোকজন কুকুরগুলোকে ধরার চেষ্টা করছেও বলে জানান তিনি।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, কুকুর নিয়ে মহামান্য হাইকোর্টের অবজারভেশন থাকায় রাস্তার কুকুর নিধনের সুযোগ নেই। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বললে আমরা বেওয়ারিশ কুকুর ধারে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করবা। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে র‌্যাভিস ভাইরাসে আক্রান্ত কুকুর এসব মানুষকে কামড়েছে। সম্ভব হলে আক্রান্ত স্থানে খারযুক্ত সাবান দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় ধরে ভালো করে ঘষে ঘষে ধুতে হবে। এখন যত দ্রুত সম্ভব টিকা নিতে হবে।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা: মোকছেদুল মোমিন বলেন, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাস্তা দিয়ে চলাচল করার সময় সাধারণ জনগণকে অবশ্যই সতর্ক হয়ে চলাচল করতে হবে। আর বেওয়ারিশ কুকুরের কামড় দিলেই দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে গিয়ে টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

পৌরসভার মেয়র মো. রমজান আলী বলেন, কুকুরের বিষয়টি আমি ইতোপূর্বে জেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। বেওয়ারিশ কুকুরের বিষয়ে সিভিল সার্জন অফিস ও প্রাণিসম্পদ অফিস পৌরসভার কাছে সহযোগিতা চাইলে করা হবে বলে তিনি জানান।

সোহেল হোসেন/আরকে