ফরিদপুরের সেই ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যকে পদ থেকে অপসারণ
ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে দুই নির্মাণশ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান তপন ও এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাসকে নিজ পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউপি শাখা-১ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে। রোববার (৭ জুলাই) জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পূরবী গোলদার স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেহেতু, ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলাধীন ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান তপন ও এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামে গত ১৮ এপ্রিল দুইজন নির্মাণশ্রমিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার আনীত অভিযোগে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৩৪(৪) (খ) (ঘ) ধারা অনুযায়ী জেলা প্রশাসক, ফরিদপুর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলাধীন ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান তপন ও এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে উল্লিখিত অভিযোগে তাদের দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় মর্মে সরকার মনে করে। সেহেতু, চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান তপন ও এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাস স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯-এর ৩৪(৪) (খ) (ঘ) ধারার অপরাধ সংঘটিত করায় একই আইনের ৩৪ (৫) ধারা মোতাবেক তাদের স্বীয় পদ হতে অপসারণ করা হলো।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মধুখালী, ফরিদপুর স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯-এর ৩৫(১) (২) ধারা মোতাবেক শূন্য ঘোষণা সংক্রান্ত গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী সার্বজনীন কালী মন্দিরের প্রতিমার শাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে ওই মন্দির সংলগ্ন পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক নির্মাণকাজে নিয়োজিত চার নির্মাণশ্রমিককে স্কুল ঘরের একটি কক্ষে আটকে মারপিট করা হয়। এ ঘটনায় দুই নির্মাণশ্রমিক আশরাফুল খান (২০) ও আসাদুল খান (১৭) ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এরা দুই সহোদর।
এদিকে গত ২৩ এপ্রিল এ সংক্রান্ত দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে দেখা যায় ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান তপন ও এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাস শ্রমিকদের মারপিটে অংশ নেন। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য আত্মগোপনে চেলে যান। তাদের আজ পর্যন্ত পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারিনি।
এ বিষয়ে মধুখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন বলেন, ১৮ এপ্রিল রাতে পঞ্চপল্লীতে সহিংস ঘটনায় হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা ও মন্দিরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮ জনকে হত্যা মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া ইতোমধ্যে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় চারজন এবং হত্যা মামলায় সাতজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান অত্যন্ত চতুর প্রকৃতির লোক। তিনি মুঠোফোন ব্যবহার করছেন না। তাকে ও ইউপি সদস্যকে গ্রেপ্তারের জন্য একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
জহির হোসেন/এমজেইউ