কাউনিয়ায় বিপৎসীমার কাছাকাছি তিস্তার পানি, পানিবন্দি ৪০০ পরিবার
ভারী বর্ষণ আর ভারতের উজান থেকে আসা ঢলে রংপুরের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার খুব কাছাকাছি দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষজন।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, রোববার (৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় রংপুরে তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ২৯ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার, যা (স্বাভাবিক ২৯ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
এর আগে বিকেল ৩টায় কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার নিচ, দুপুর ১২টা ও সকাল ৯টায় বিপৎসীমার দশমিক ১১ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৬টায় দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ২৯ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার ধরা হয়।
এদিকে কাউনিয়ায় উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তার শাখা নদীসহ মানস নদীতেও পানি বাড়ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চল গ্রামের ৪০০ পরিবার। অনেকেই তাদের শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদিপশু উঁচু স্থানে সরিয়ে নিয়েছেন। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চরাঞ্চলের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পানির স্রোতে ভেঙে গেছে তিস্তার শাখা মানাস নদীতে বাঁশের সাঁকো।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার (পিআইও) আহসান হাবিব সরকার ঢাকা পোস্টকে জানান, উপজেলার শহীদবাগ, টেপামধুপুর. বালাপাড় ও হারাগাছ ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী এবং চরাঞ্চল গ্রাম এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় চার শতাধিক পরিবার।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শায়লা জেসমিন সাঈদ বলেন, চরঢুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উঠান প্লাবিত হওয়ায় ক্লাসে পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়টি ২০১২ সালে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর স্থানীয় এক বাড়িতে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। শনিবার রাত থেকে তিস্তা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় চর ঢুষমারা গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উঠানে পানি উঠেছে। শিক্ষকরা ক্লাসে পাঠদান বন্ধ করে চলে এসেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহিদুল হক বলেন, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি। সরকারিভাবে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেওয়া আছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখা হচ্ছে এবং নদীর তীরবর্তী পানিবন্দিদের তালিকা করা হচ্ছে।
এদিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। পানির চাপ মোকাবিলায় ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। অব্যাহত বৃষ্টিপাত আর শুষ্ক মৌসুমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রভাব পড়েছে সাম্প্রতিক বন্যায়।
আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টা ও বিকেল ৩টায় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৯৬ সেন্টিমিটার, যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার দশমিক ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৯টা ও ৬টায় বিপৎসীমার দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা ঢাকা পোস্টকে বলেন, উজানের ঢলে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানির চাপ সামলাতে ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি হয়েছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।
এদিকে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, অসময়ের বন্যা ও ভাঙনে প্রতিবছর এক লাখ কোটি টাকার সম্পদ তিস্তার গর্ভে চলে যায়। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য নদী খনন, সংরক্ষণ ও তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা ছাড়া বিকল্প নেই।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ