টাঙ্গাইলে যমুনা নদীতে ৮ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেলেও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিচ্ছে। এতে নতুন নতুন এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

এ ছাড়া বন্যার পানিতে ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকরা। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না থাকায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। পানি ভেঙে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হচ্ছে।

সরেজমিনে ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা, অর্জূনা, নিকরাইল ও গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে দেখা গেছে বন্যায় ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। এতে রাস্তাঘাটও তলিয়ে গেছে। পানি স্রোতে কয়েড়া এলাকায় একটি পাকা সড়ক ভেঙে গেছে। এতে কয়েকটি গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েকশ একর ফসলি জমি। এ ছাড়া যমুনা নদীর পাড় উপচে পানি নিম্নাঞ্চলে আসার কারণে উপজেলার কষ্টাপাড়া, খানুরবাড়ি, ভালকুটিয়া, স্থলকাশি, গাবসারা ইউনিয়নের চর গাবসারা ও পুংলিপাড়া এবং নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা, পাটিতাপাড়া ও বাহাদুর টুকনাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষজন কয়েক দিন থেকে পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। শুধু তাই নয় নদীর পানি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও উঠেছে। এতে সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সারা দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে ষাণ্মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষা শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে তলিয়ে যাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই পরীক্ষা দিতে আসছে। এ ছাড়া টাঙ্গাইল সদর, গোপালপুর, নাগরপুর ও কালিহাতীর বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে টাঙ্গাইলে যমুনা নদীসহ সব নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এরসঙ্গে বৃষ্টি ও নদীতে স্রোতের কারণে পাড় ভেঙে যাচ্ছে। এতে বসতভিটা নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় নিঃস্ব হচ্ছে নদীপাড়ের লোকজন। কয়েক দিন ধরে বন্যায় আক্রান্ত হলেও এখনো কোনো ত্রাণ সহায়তা পায়নি বানভাসিরা। বিশেষ করে চরাঞ্চলের মানুষজন উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিলেও সংকট দেওয়া দিয়েছে সুপেয় পানির। এ ছাড়া গবাদিপশু লালনপালন নিয়ে বিপাকে রয়েছেন তারা। পানি কমতে শুরু না করায় হতাশা বাড়ছে বানভাসিদের।

ভূঞাপুর উপজেলার পাটিতাপাড়া আবু সুফিয়ান ও জালাল প্রামাণিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, যমুনা নদীটি বাড়ি থেকে প্রায় দেড় থেকে দুই মাইল দূরে ছিল। গত কয়েক বছর ধরে যমুনার ভাঙনে ফসলের জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। থাকার জায়গাটুকুও ভেঙে যাচ্ছে। অনেকেই উঁচু বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে।

খানুরবাড়ির আব্দুল মজিদ বলেন, ‘অন্যের জায়গায় থাকি আর অন্যের জমিতে সবজি আবাদ করে সংসার চালাই। আন্নেরাই দেহুন কীভাবে সব চাল কুমড়া আর শশার খেত তলায় গেছে। এহন আমরা যামু কুনু খামু কি?’

ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুনুর রশীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সহায়তার জন্য উপজেলার আড়াই হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা পাঠিয়েছি। রোববার বিকেল থেকে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি নজরদারি করা হচ্ছে।

অভিজিৎ ঘোষ/এমজেইউ