‘ডলারভর্তি লাগেজ’ ছাড়াতে খোয়া গেল প্রায় ৭৮ লাখ টাকা
৩৫টি ব্যাংকের ৮৬টি এটিএম কার্ড, ব্যাংকের ১৫১টি চেকের পাতাসহ সোহাগ শেখ (২৪) নামের এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ডলার ভর্তি লাগেজ দেওয়ার কথা বলে ৭৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রোববার (৭ জুলাই) সকালে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরে এসব তথ্য জানান উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) আলী আশরাফ ভূঞা।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত একটি অ্যানড্রয়েডসহ চারটি মোবাইল সেট ও ৮টি সিম জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত সোহাগ শেখ শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের পাঁচগাও গ্রামের জব্বার শেখের ছেলে। তিনি একটি মাদরাসার হাফেজি বিভাগে পড়তেন। সোহাগ শেখ প্রতারক চক্রের প্রথম স্তরের প্রথম ম্যান। এখানে কমপক্ষে আরও ৪ থেকে ৫টি ধাপে ১০/১২ জনের সদস্য রয়েছে। এই চক্রের সদস্য বিদেশেও রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর বরিশাল নগরীর বাসিন্দা রত্নেশ্বর মাঝির (৬৫) মোবাইল নম্বরে খায়রুন নেছা নামে একজন ফোন দেন এবং নিজেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশন কাস্টমস অফিসার হিসেবে পরিচয় দেন। এরপর তিনি জানান, রত্নেশ্বর মাঝির নামে এলিজাবেথ এ্যারিস নামের এক ব্যক্তি একটি লাগেজ পাঠিয়েছেন। লাগেজে বিপুল পরিমাণ ডলার আছে। কাস্টমসের বিভিন্ন স্তরে টাকা দিয়ে সেই লাগেজ ছাড়ানোর জন্য বলেন কথিত খায়রুন নেছা। লাগেজ ছাড়ানোর জন্য রত্নেশ্বর ২৩ দিনে বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ও বিকাশ নম্বরে সর্বমোট ৭৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা পাঠান। লাগেজ ছাড়ানোর জন্য আরও টাকা দাবি করলে বিষয়টি সন্দেহ হয় রত্নেশ্বরের। তিনি বুঝতে পারেন, প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করলে পুলিশ তদন্তে নামে। তদন্তে বেরিয়ে আসে প্রতারক চক্রের তথ্য। এর মধ্যে চক্রের প্রথম স্তরের সদস্য সোহাগ শেখকে শনিবার (৬ জুলাই) সাইবার টিম অভিযান চালিয়ে ঢাকার মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, এ চক্রের বাকী সদস্যের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ। আর গ্রেপ্তার সোহাগ শেখের বিরুদ্ধে ঢাকার খিলগাও থানাসহ একাধিক থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এরা মূলত বিদেশি নাগরিকের নামে থাকা ফেসবুক আইডি থেকে টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। যেখানে ওই ফেসবুক আইডির ব্যক্তি নিজেকে সেনাবাহিনী, পুলিশ কিংবা অন্য কোনো বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য হিসেবে দাবি করেন এবং ব্যবসা করার জন্য দেশে আসতে চান। আর তখন বিদেশ থেকে বাংলাদেশের ব্যক্তিকে কিছু গিফট পাঠানোর নামে প্রতারণার নাটক শুরু হয়। গিফট পাঠিয়ে টার্গেট ব্যক্তির মেইল বা অন্য মাধ্যমে কিছু কাগজ পাঠানো হয়। যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের কাস্টমস কর্মকর্তার পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির পাঠানো কাগজের সঙ্গে মিলে যায়। আর এর মাধ্যমেই প্রথম বিশ্বাসটা অর্জনের চেষ্টা করে প্রতারকরা। চক্রটি এত ধূর্ত যে টাকা পাঠানোর কয়েক মিনিটের মাথায় বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তা উঠিয়ে ফেলে। আর গ্রেপ্তারকৃতের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া এটিএম কার্ডগুলো উত্তোলনের ক্ষেত্রে যে আইডি কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো এ চক্রের কারও নয়। এখানেও জালিয়াতি করেছে তারা।
গ্রেপ্তারকৃত সোহাগ শেখ বলেন, আমি বেতনে চাকরি করতাম। এই চক্রের কে কোন স্তরে তা আমি জানি না।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমজেইউ