সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে কয়েক দিন ধরে সারা দেশে নানা কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার (৭ জুলাই) বেলা ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে একই দাবিতে ছাত্র সমাবেশের ডাক দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। তবে আন্দোলনরতদের এদিন মাঠে নামতেই দেয়নি ছাত্রলীগ।

সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের মুক্তির মোড়ে গেলে দেখা যায়, সমাবেশে অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তায় অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। সমাবেশস্থল পরিদর্শনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকেও (সদর সার্কেল) দেখা যায়। আন্দোলনে অংশ নিতে নওগাঁ সরকারি কলেজসহ শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিচ্ছিন্নভাবে আসতেও দেখা যায়। তবে সেখানে আসার পর জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পরে ফিরে যেতে হয় তাদের।

সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে মুক্তির মোড় শহীদ মিনারের আড়ালে মানববন্ধনের ব্যানার, প্লাকার্ড ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে সমন্বয়কের অপেক্ষায় ছিলেন নওগাঁ সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী নাকিব আল হাসান। শেষ পর্যন্ত যথাসময়ে সমন্বয়ক সমাবেশস্থলে উপস্থিত হননি।

এ প্রসঙ্গে নাকিব আল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত তারিকুল ভাইয়ের (সমন্বয়ক) সঙ্গে থেকে সব প্রস্তুতি নিয়েছি। এই সমাবেশে শত শত শিক্ষার্থীর অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত রাতেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হুমকি-ধামকি দিয়ে তারিকুল ভাইকে এই আন্দোলন থেকে সরিয়ে দিয়েছে। একপ্রকার বাধ্য হয়ে তিনি মেস ছেড়ে বাড়িতে পালিয়েছেন। সকালে সমাবেশস্থলে এসে দেখছি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আমানুজ্জামান শিউল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমাবেশে অংশ নিতে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত আসার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রত্যেককে ঘরে চুপচাপ থাকতে বলেছে। নয়তো ভবিষ্যতে দেখে নেওয়ায় হুমকি দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতারা।

নওগাঁয় কোটাবিরোধী আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সৈয়ব আহমেদ সিয়াম ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রামে থাকায় ফোনে সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তারিকুলের মাধ্যমে সমাবেশটি আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। শনিবার (৬ জুলাই) রাতে তারিকুলের মুঠোফোনে ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা কল দিয়ে হুমকি দেয়। তাদের চাপে পড়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজেকে এই কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় তারিকুল। ছাত্রলীগের নেতারা কখনোই চায়নি এই সমাবেশ সফল হোক। আমাদের আন্দোলনকারীদের তারা মাঠেই নামতে দেয়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আমানুজ্জামান শিউল ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই। এরপরও কেউ আন্দোলন করলে তাদের আমরা বাধা দিচ্ছি না। শিবিরের প্রেতাত্মারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের যেকোনো যৌক্তিক দাবিতে পাশে থাকবে ছাত্রলীগ।

আরমান হোসেন রুমন/এমজেইউ