শনিবার রাত ৮টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে তোলা ছবি

সাপে কাটা এক রোগীর তথ্য এবং বক্তব্য ভিডিও করতে গিয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক সাংবাদিককে আটকে রেখে হেনস্থা করার প্রতিবাদে হাসপাতালের পরিচালক মো. হুমায়ুন কবিরকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম দিয়েছেন ফরিদপুরে কর্মরত সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতারা।

শনিবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের এক জরুরি সভায় এ দাবি জানানো হয়।

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ওই সভায় বক্তব্য রাখেন জেলায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিক নেতারা।

এর আগে শনিবার (৬ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে সাংবাদিক হেনস্থার এ ঘটনা ঘটে হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দোতলায় অবিস্থত পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে। ওই সময় থেকে বিকেলে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অন্তত এক ঘণ্টা ওই ফটো সাংবাদিককে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে ফরিদপুর কোতয়ালী থানার পুলিশ ওই ফটো সাংবাদিককে উদ্ধার করে।

ভুক্তভোগী ফটো সাংবাদিকের নাম শেখ নয়ন (৩১)। তিনি ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ফরিদপুর প্রতিনিধি এসএম মাসুদুর রহমানের ফটো সংবাদিক হিসেবে কাজ করেন।

ভুক্তভোগী ফটোসাংবাদিক জানান, শনিবার দুপুর ২টার দিকে তিনি হাসপাতালটির পুরনো ভবনের দোতলায় রাসেলস ভাইপার সাপে কাটা রোগীর ভিডিও করতে গেলে তাকে বাধা দেন ওই হাসপাতালে কর্মরত আনসার সদস্য সুব্রত দাস ।

আনসার সদস্য সুব্রত দাস শেখ নয়নকে ছবি তুলতে বাধা দেন এবং তার ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে শেখ নয়নকে ওই ভবনের নিচ তলায় আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা আসাদুল্লাহ সুমনের কক্ষে নিয়ে আটকে রাখা হয়। 

দুপুর ২টা ৫০ এর দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং দৈনিক সমকাল ও চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর টেলিভিশনের নিজস্ব প্রতিবেদক হাসানুজ্জামান ওই হাসপাতালের পরিচালক মো. হুমায়ুন কবিরকে ফোন দিয়ে, কেন নয়নকে আটকে রাখা হয়েছে জানতে চান। উত্তরে পরিচালক জানান, হাসপাতালের ভেতরে যেকোনো ছবি নিতে প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি প্রয়োজন হয়, সে অনুমতি নেয়নি। 

সংরক্ষিত এলাকা ছাড়া ছবি নিতে অনুমতি প্রয়োজন হয় কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের নিষেধ আছে। পরিচালক তখন ফোন কলে ওই সাংবাদিকের সাথেও দুর্ব্যবহার করেন।

প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে খবর পেয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহরিয়ার হাসপাতালে গিয়ে শেখ নয়নকে উদ্ধার করেন।

শেখ নয়ন জানান, জেলার  চরভদ্রাসন উপজেলায় রাসেলস ভাইপার সাপে কাটা একজন রোগীর ছবি ও তথ্য সংগ্রহে হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দোতালায় সার্জারি ওয়ার্ডে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ছবি তোলা ও তথ্য সংগ্রহের সময় তার সাথে দুর্ব্যবহার করেন  আনসার সদস্যরা। পরে তাকে আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তার কক্ষে নিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।বিষয়টি ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহাসান তালুকদারকেও অবহিত করা হয়েছে।  

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহরিয়ার বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে তথ্য পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে শেখ নয়নকে উদ্ধার করে এনেছি। তাকে একটি কক্ষে নিয়ে জোর করে বসিয়ে রাখা হয়েছিল।

বিষয়টি নিয়ে ফরিদপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এক জরুরি সভা করেন সাংবাদিকরা।

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের  সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, আমরা আগামী ৭২ ঘণ্টা মধ্যে ওই পরিচালককে ফরিদপুর মেডিকেল থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি তিনি কেন সাংবাদিক হেনস্থা করলেন এর বিচার চেয়ে স্বাস্হ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিবসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে চিঠি দিয়ে বিচারের দাবি জানাব আমরা। গণমাধ্যমের ওপর পীড়াপীড়ি করে তিনি তার কোন কুকর্ম ঢাকতে চান তা আমরা জানতে চাই।

তিনি বলেন,আমরা সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেই বলতে চাই আগামী ৭২ ঘণ্টা মধ্যে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রত্যাহার করা না হলে আমরা কলম ছেড়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হব।

জহির হোসেন/আরকে