কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার আজ ৮ বছর পূর্ণ হলো। ২০১৬ সালের এদিন ঈদুল ফিতরের জামাতের আগে মাঠে প্রবেশপথের সবুজবাগ সংযোগ সড়কে মুফতি মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদের সামনের তল্লাশি চৌকিতে জঙ্গি হামলা চালানো হয়। এ হামলায় দুজন পুলিশ সদস্য, এক গৃহবধূ ও এক জঙ্গি নিহত হন।

এখনও ঘাতকদের বিচারের অপেক্ষায় নিহতদের স্বজনরা। ইতিহাসের বর্বরোচিত এ হামলার এতো বছর পরও রয়ে গেছে মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি চিহ্ন। এই হামলার কথা মনে হলেই স্থানীয়রা এখনও আঁতকে ওঠেন।

রোববার (৭ জুলাই) সকালে জঙ্গি হামলার স্থান- শোলাকিয়া মুফতি মোহাম্মদ আলী মসজিদের সামনে নিহত দুই পুলিশ সদস্যের ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।

এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাক হোসেন, মো. নূরে আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আল-আমিন হোসাইন, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ, জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মায়া ভৌমিক ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিলকিছ বেগমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, এদিন জঙ্গিরা নির্মমভাবে চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পুলিশের দুই সদস্য জহিরুল ইসলাম ও আনসারুল হককে। পরে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের বন্দুকযুদ্ধ চলে অনেকক্ষণ। এসময় একটি গুলি সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা গৌরাঙ্গনাথ ভৌমিকের ঘরের টিনের জানালা ভেদ করে তার স্ত্রী ঝর্ণা রানী ভৌমিকের মাথায় গিয়ে লাগে। সঙ্গে সঙ্গেই মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে মারা যান তিনি। এসময় পুলিশের গুলিতে জঙ্গি আবির রহমান নিহত হন। 

এছাড়া জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় আট পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলে দায়িত্বে থাকা তৎকালীন পাকুন্দিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামসুদ্দিন বাদী হয়ে জঙ্গি শফিউল ইসলাম ও জাহিদুল হক তানিমের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা জঙ্গিদের আসামি করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। তবে মোট ২৪ জন আসামির মধ্যে বিভিন্ন সময় বন্দুকযুদ্ধে ১৯ জন মারা যান।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, নিজেদের জীবন দিয়ে সেদিন পুলিশ সদস্যরা জঙ্গিদের প্রতিহত করেছিলেন। নাহলে আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারতো।

তিনি আরও বলেন, এ মামলায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত হয়েছে। আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মামলার বিচারকাজ চলছে। ন্যায়বিচার পাবো বলে আশা করি। সেই ঘটনার পর থেকে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। শহরের যেকোনো প্রোগ্রামে শোলাকিয়া জঙ্গি হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নিহত পুলিশ সদস্য আনসারুল হক, জহিরুল ইসলাম ও গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিকের স্মরণে প্রতি বছর ৭ জুলাই ঘটনাস্থলে অস্থায়ী বেদিতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কিশোরগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আবু নাসের মো. ফারুক সঞ্জু বলেন, জঙ্গি হামলার ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমানে সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মামলার ৫ আসামির মধ্যে হলি আর্টিজেন মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৩ আসামি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজিব গান্ধী, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান ও সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহমুদ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন। অপর দুই আসামি আনোয়ার হোসেন রাজশাহী এবং জাহিদুল হক তানিম ঢাকা কারাগারে বন্দি আছেন। বর্তমানে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। এ মামলায় ১০১ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ৬০ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

শোলাকিয়া জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২০১৬ সালের ১০ জুলাই কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা করে। ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই পাঁচ জঙ্গিকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেন কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ইন্সপেক্টর আরিফুর রহমান। চার্জ গঠন করা হয় একই বছরের ২৮ নভেম্বর।

মোহাম্মদ এনামুল হক হৃদয়/পিএইচ