সরকারি লোকজন তো কোনো ব্যবস্থাই নিলো না, এহন আমরা নিজেরাই বালু ও প্লাস্টিকের বস্তা কিনে তাতে বালু ভরে ভাঙন স্থানে ফেলছি। মনের শান্তি মেটাতেই এ কাজ করছি। তাছাড়া তো আমাদের আর কোনও উপায় নেই।

শনিবার (৬ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে দৌলতদিয়া ৬ নম্বর ফেরিঘাট সংলগ্ন সাত্তার মেম্বার পাড়া ভাঙন স্থানে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন ষাটোর্ধ্ব শেখ আলমাস।

তিনি আরও বলেন, ভাঙন ঠেকাতে আমরা বস্তা ফেলছি না, নদীর ঢেউ যেন একটু কম লাগে সেজন্য আমরা ভাঙন কবলিত স্থানে এলাকাবাসীরা মিলে আপাতত আড়াই'শ বালুর বস্তা ফেলছি। আমরা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। 

সরজমিনে ৬ নম্বর ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙন কবলিত স্থানে ভুক্তভোগী নারী, পুরুষ ও শিশুরা বালু মাথায় করে নিয়ে নদীর পাশে প্লাস্টিকের পাতলা বস্তায় ভরছে। এসময় তারা বিভিন্ন ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ভুক্তভোগী রোজিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে সুখেই ছিলাম। কিন্তু নদী আমার স্বপ্ন নিয়ে গেছে। সরকার শুকনো সময় কোনও বস্তা ফেলে না, বন্যা আসলে সব ভেঙে গাঙ্গে নিয়ে যায়। আমার ঘর পর্যন্ত ভেঙে চলে গেছে। এখন কোথায় যাই, কী করবো, চিন্তায় আছি।

৬ নম্বর ঘাটের মুদি দোকানদার সিরাজ মৃধা বলেন, গত এক সপ্তাহে প্রায় ৫০ মিটারের উপরে বসতভিটা নদীগর্ভে গেছে। সরকারি কর্মকর্তারা যদি আগেই কিছু জিও ব্যাগ ফেলতো, তাহলে আজ আমার দোকানটা ভাঙনের কবলে পড়তো না। সব আমাদের কপাল, কী আর বলবো। এজন্য নিজেরাই টাকা দিয়ে পাতলা বস্তা কিনে তাতে বালু ভরে ফেলছি।

ভুক্তভোগী শহীদুল্লাহ শেখ বলেন, চেয়ারম্যান, মেম্বাররা শুধু ভোটের সময় এসে প্রতিশ্রুতি দেয়, আর কোনও খবর থাকে না। এবার ভাঙন দেখার জন্য সবাই আসছে কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নাই।

বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, দৌলতদিয়ায় যে ৭টি ঘাট রয়েছে তার আশেপাশে ভাঙন দেখা দিলে সেটা আমরা জিওব্যাগ দিয়ে রক্ষা করতে চেষ্টা করি, তাছাড়া প্রতিবছরে তীব্র ভাঙনে রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করে থাকে। ঘাট রক্ষায় যে কাজগুলো লাগবে সেটাই বিআইডব্লিউটিএ করে থাকে। আমরা আজ ঘাটে আসছি- দেখলাম ভাঙন কবলিত স্থান, ঘাট রক্ষার জন্য কিছু করতে হলে আমরা করবো।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, ৬ নম্বর ঘাটের সাত্তার মেম্বার পাড়ায় যে ভাঙন দেখা দিয়েছে, সেটার ব্যাপারে আমি ইতোমধ্যে ডিসিকে জানিয়েছি, এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।

এ ব্যাপারে রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল আমিনকে কয়েকবার ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/পিএইচ