রাস্তা আছে তবে চলার মতো অবস্থা নেই। তাই চলতে হচ্ছে রাস্তার দুপাশের ড্রেন বা ফুটপাতের ওপর দিয়ে। একটু বৃষ্টি হলেই খানাখন্দভরা সড়কগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পুকুর বা খালে রূপ নেয়। এমন বেহাল দশা যশোর পৌরসভার আওতাধীন ১০ থেকে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের। গত পাঁচ বছরে যশোর শহরের বেশ কয়েকটি সড়কের চিত্র একেবারেই বদলায়নি। বরং আরও ভয়াবহ জনদুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। 

যশোর পৌরসভার নীলগঞ্জ তাতীপাড়া সড়ক, খড়কী সড়ক, গুরুদাস বাবু লেন, আনসার ক্যাম্প সড়ক হয়ে সন্যাসী দীঘি মোড়, চোরমারা দীঘিসহ প্রায় ১০ থেকে ১২টি সড়কের পিচ উঠে বেরিয়ে গেছে বালু আর মাটি। এ সব সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দের। গত তিনদিনের বৃষ্টিতে এ সব সড়কে সৃষ্ট গর্তগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও একটু বৃষ্টি হলেই পুরো সড়ক পানিতে তলিয়ে পুকুর বা খালে রুপ নিচ্ছে। আর এ সব সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে নানা রকম দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারণ জনগণ ও যানবাহন। দীর্ঘদিনের এ সড়ক দুর্ভোগের কোনো সুরাহা না মেলায় ক্ষুব্ধ পৌরবাসী।

ইসমাইল হোসেন নামে এক চাকরিজীবী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি প্রতিদিন চারখাম্বার মোড় দিয়ে এ গুরুদাস বাবু লেন দিয়ে মাইকপট্টি যাতায়াত করি। মাইকপট্টির মধ্যেই আমার অফিস। আমার তো অন্য কোনো রাস্তা নেই যাওয়ার। মোটরসাইকেল নিয়ে এ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তিনবার অ্যাক্সিডেন্ট করেছি। বৃষ্টি হলে সড়ক তলিয়ে যায় গর্ত দেখা যায় না।

লামিয়া খাতুন নামে এক স্কুলছাত্রী বলেন, আমার বাসা পোস্ট অফিস পাড়া। বৃষ্টি হলে আমাদের গুরুদাস বাবু লেন রোডে জলাবদ্ধতা হয়। তখন স্কুলে যেতে পারি না। আর এমনি সময় গর্তে পানি বেঁধে থাকে, ফুটপাত দিয়ে যেতেও ভয় করে, পাশ থেকে একটা মোটরসাইকেল বা গাড়ি গেলে নোংরা পানি ছিটে গায়ে লাগে।

নাসির শেখ নামের এক রিকশাচালক ঢাকা পোস্টকে বলেন, যশোরের অলিগলি মিলিয়ে ২০টা সড়কের খুব খারাপ অবস্থা। আমি ভাড়ার রিকশা চালাই। প্রতিদিন মহাজনকে ২৫০ টাকা করে দেওয়া লাগে, আর এই ভাঙাচুরা রাস্তায় রিকশা চালালে, আজকে রিং বাঁকবে, কালকে এক্সেল ভাঙবে, উল্টো ২০০-৪০০ টাকা ক্ষতিপূরণ নিজের পকেট থেকে দেওয়া লাগে।

শহরের এমএম কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা দেলওয়ার সিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ রাস্তাটা দিয়ে শ শ ছাত্র-ছাত্রী চলাফেরা করে। বৃষ্টি হলে খালে রুপ নেয় এ রাস্তা। কত পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে তবুও কোনো সুরাহা মিললো না এ সড়কের। কবে নাগাদ এ থেকে আমরা মুক্তি পাব তা জানি না।

যশোর পৌরসভার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নীলগঞ্জ তাতীপাড়া সড়ক। এই সড়কটি মনিহার-মুড়লী সড়কের বকচর থেকে মনিহা-নড়াইল মহাসড়কের ঝুমঝুমপুরের সংযোগ সড়ক। এ সড়কটি বড় যানবাহনের চলাচলের উপোযোগী না হলেও পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকে বড় যানবাহনের চাপ বেড়েছে সড়কটিতে। বেনাপোল, ভোমরা বন্দর থেকে আসা ঢাকাগামী ভারী যানবাহনসহ বিভিন্ন বাস ও পরিবহন মনিহার মোড় না ঘুরে নীলগঞ্জ তাতীপাড়া সড়কটিকে বাইপাস সড়ক হিসেবে ব্যবহার করে নিয়মিত চলাচল করে। পিচ উঠে মাটি বেরিয়ে গেছে গোটা সড়কটিতে। টানা চার বছরেরও অধিক সময় এমন বেহাল সড়ক দিয়ে চলাচল করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। একাধিক দুর্ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ তারা। 

তাতীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই সড়কের মূল সমস্যা বড় যানবাহন চলাচল। এ সড়ক তো বড় যানবাহনের জন্য না। আর যখন এ সড়কের বেহাল দশা তখন কর্তৃপক্ষের কোনো সংস্কারের উদ্যােগ নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কিছুদিন আগে খোয়া, বালি ফেলেছিল তা বৃষ্টিতে সব ধুয়ে মিশে গেছে।

তিনি বলেন, প্রায় দিন এখানে দুর্ঘটনা ঘটে। গতকালও দুটো মোটরসাইকেল গর্তের মধ্যে পড়ে গেছে। এর আগে একদিন এই সড়ক দিয়ে মেইন রোডে ওঠার সময় একটা রিকশা অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। আমরা এই সড়ের দ্রুত সংস্কার চাই।

সৌলেন দাস নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের নীলগঞ্জ তাতীপড়া সড়কের পাশ দিয়ে মানুষ হাঁটতেও ভয় পায়। বৃষ্টি হলে পানি জমে। আর মোটরসাইকেল বা গাড়ি গেলে রাস্তা দিয়ে পানি ছিটে গায়ে লাগে। রোদের সময় প্রচণ্ড ধুলোবালির সৃষ্টি হয়। আমরা এ সড়কের দুপাশে যারা বসবাস করি তারা এক কথায় নরকের মধ্যে বসবাস করি।

এদিকে যশোর পৌরসভার সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জানা গেছে, যশোর পৌরসভার বড় বড় সড়ক সংস্কারের জন্য ৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রস্তাবনা উপরের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া শহরের অভ্যন্তরীণ ছোটখাটো সড়ক সংস্কার ও মেরামতের জন্য ১৭ কোটি টাকার প্রকল্প পেয়েছে যশোর পৌরসভা। যেটির টেন্ডার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শরীফ হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, যশোর পৌরসভার সংস্কার উপযোগী এমন সড়কের তালিকা করে আমরা ঢাকাতে প্রকল্প পাঠিয়েছি। এটি বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে কাজ করা হবে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, নীলগঞ্জ তাতীপাড়া সড়কের ধারণক্ষমতা কম। কারণ পৌরসভা থেকে যে সড়কগুলো করা হয় সেগুলোর ধারণক্ষমতা কম থাকে। এ সড়কটিতে পদ্মা সেতু হওয়ার পর চাপ বেড়েছে। একটি প্ল্যান করে আমরা ঢাকায় পাঠিয়েছি। এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। আশা করি এক বছরের মধ্যে আমরা এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারব।

এ্যান্টনি দাস অপু/আরকে