গাজীপুর জেলা জাতীয় পার্টির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, দেশের বর্তমান অবস্থা ভালো নয়, সাধারণ মানুষ অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছে। জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, মানুষের আয়-ইনকাম সেভাবে কমছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, মজুরির দাম কমছে। ডলারের সঙ্গে আমাদের টাকার মানের অবমূল্যায়ন হচ্ছে। ডলারের দাম বেড়ে গেছে। দেশে পর্যাপ্ত ডলার নেই। আমাদের আমাদের বিভিন্ন পণ্যের আমদানি ব্যয় বাড়ছে, সঙ্গে সঙ্গে রিজার্ভও কমে যাচ্ছে।

তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, খালি কর্মীবাহিনী জোগালেই সংগঠন শক্তিশালী হবে না। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হলে আমাদের রাজনীতি দিতে হবে। জনগণ যেই রাজনীতি চায়, তাদের সেই রাজনীতি দিতে হবে। রাজনীতি করতে হলে কষ্ট করতে হয়, কষ্টের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। যেকোনও সময় যেকোনও বিপদে দাঁড়াতে হবে। তাহলেই সংগঠন এগিয়ে যাবে। তা না পারলে জাতীয় পার্টি হবে না। তখন যে সংগঠন হবে তা হবে অপকর্ম/কুকর্মের সংগঠন।

শনিবার (৬ জুলাই) গাজীপুর মহানগরের তেলিপাড়া এলাকায় সাগর-সৈকত কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত জাতীয় পার্টির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জিএম কাদের এসব কথা বলেন।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গাজীপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক আব্দুস সাত্তার মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মো. মুজিবুল হক চুন্নু।

সম্মেলন পরিচালনা করেন গাজীপুর জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব মো. কামরুজ্জামান মন্ডল।

সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব অ্যাড. মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. জহিরুল ইসলাম জহির, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান খান, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোহাম্মদ রাজু, জাপার ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন, গাজীপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মো. শরিফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. রফিকুল ইসলামুগব অনেকে।

জিএম কাদের ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের কোটা প্রথার আন্দোলন বিষয়ে বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সম্মান করি। কিন্তু তাদের ছেলে, তাদের পরের প্রজন্ম কোটা প্রথার বিষয়ে খুব একটা নীতির মধ্যে আসে না। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের দেশ সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এটা বাধা স্বরূপ হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যে সংবিধান আছে সেই কোটা সিস্টেম ওই সংবিধানের ২৯ এর ১, ২ ও ৩ নং ধারা যদি কেউ যেন সেখানে দেখবেন এ কোটা সম্পূর্ণ সংবিধান বিরোধী। এটা আমার কোনও কথা নয়। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, বর্তমান সরকার এটা চাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু সেখানে হাত-পা বাঁধা। এসব ধারা পরিবর্তনের ক্ষমতা এ সংবিধানে দেওয়া হয়নি। সংবিধান অনুযায়ী এ কোটা প্রথা বৈধ করার কোনও উপায় নেই।

জিএম কাদের আরও বলেন, ২০১০ সালে দায়মুক্তির আইন করা হয়েছিল। দায়মুক্তিতে আওয়ামী লীগ চ্যাম্পিয়ন। বিদ্যুৎখাতে দায়মুক্তি, জ্বালানি খাতে দায়মুক্তির কারণে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। দেশের রিজার্ভেও অবস্থা খারাপ হচ্ছে। যার কারণে আমাদেরও গাড়ি চলতে পারছে না, চুলা জ্বলে না। আবার আইন হয়েছে, যারা অবৈধ উপায়ে আয় করেছেন তা দায়মুক্তি দিয়ে সাদা করা যাবে। এগুলো হলো চুরির দায়মুক্তি, অপরাধের দায়মুক্তি। এসব দায়মুক্তি দিয়ে দেশকে নর্দমায় ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়াকে জেলা জাপার সভাপতি এবং মো. কামরুজ্জামান মন্ডলকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন জিএম কাদের। তাদের আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।

শিহাব খান/পিএইচ