বৃক্ষরোপণকে উৎসাহিত করতে চলছে বৃক্ষমেলা। কিন্তু মেলায় রয়েছে একটি মাত্র বৃক্ষের দোকান। বাকি সব মুখরোচক ফুচকা, চটপটি, কসমেটিকস ও প্রসাধনীর দোকান। বৃক্ষমেলার নামে এমন মেলার আয়োজন করেছে কে তা নিয়ে বন বিভাগ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গণমাধ্যমে দিচ্ছেন পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন এমন বৃক্ষমেলার আয়োজন করছে সরকারের কোন প্রতিষ্ঠান?

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মাঠ প্রাঙ্গণে চলমান বৃক্ষমেলা নিয়ে তৈরি হয়েছে এমন প্রশ্ন।

জানা যায়, ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত গোসাইরহাটে চলছে বৃক্ষমেলা। কিন্তু মেলার মাঠে দোকান সংখ্যা প্রায় ৩৯টি হলেও গাছের চারা বিক্রির দোকান মাত্র একটি। বৃক্ষমেলার নামে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার, কসমেটিকস, প্রসাধনীসহ শিশুদের খেলনার বিভিন্ন রাইড দিয়ে সাজানো এমন মেলাকে কেউ বলছেন গাছের সঙ্গে তামাশার মেলা, কেউ আবার বলছেন বৈশাখী মেলা বা বাণিজ্য মেলা। মেলার মূল ফটকে স্পষ্ট অক্ষরে লেখা রয়েছে বৃক্ষমেলাটি আয়োজন করেছে শরীয়তপুর বন বিভাগ। মেলা বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা করছে গোসাইরহাট উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু মেলায় একটি গাছের দোকান নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ার পর মেলার আয়োজক সরকারের কোন প্রতিষ্ঠান তা স্বীকার করছে না কোনো দপ্তর।

এমন বিতর্ক নিয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুর বন বিভাগের বন কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন বিভাগের মেলা করার জন্য কোনো নির্দেশনা নেই, কোনো বরাদ্দও নেই। আমরা কোনো মেলা করছি না। কারও কাছে মেলার জন্য আবেদনও করিনি। যতদূর শুনেছি, গোসাইরহাটের মেলাটি উপজেলা প্রশাসন ও নার্সারি মালিক সমিতি মিলে করছে অথবা অন্য কেউ। বন বিভাগের নাম আয়োজকের স্থলে উপজেলা প্রশাসন হয়ত ভুলে লিখেছে।

এমন বিতর্ক নিয়ে জানতে চাইলে গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ বলেন, আপনারা মেলার মূল ফটকে লেখা দেখেছেন মেলার আয়োজক বন বিভাগ। উপজেলা প্রশাসন মেলার আয়োজন করেনি। আমাদের কাছে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণের মাঠ ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে। আমরা উপজেলা পরিষদের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিষদ প্রাঙ্গণের মাঠ ব্যবহারের অনুমতি তাদেরকে (বন বিভাগ) দিয়েছি। উপজেলা প্রশাসন থেকে কোনো মেলা আয়োজন করা হয়নি।

কিন্তু বন কর্মকর্তা জানিয়েছে তারা কোনো মেলা করার জন্য আবেদন করেনি এমন প্রশ্নে ইউএনও বলেন, আপনি মেলার মূল ফটকের ব্যানার দেখেছেন, সেখানে কী লেখা রয়েছে? তারপরও যেহেতু বিষয়টি নিয়ে কথা উঠেছে এবং উনারা (বন বিভাগ) অস্বীকার করছে। আসলে তারা ওইভাবে গাছের দোকান দিতে পারেনি। অন্যান্য খাবারের দোকান বেশি। এসব নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সেহেতু আমরাও এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা হয়তোবা মেলা আর চলমান রাখব না। তাদেরকে আমরা মাঠ ব্যবহারের যে অনুমতি দিয়েছি, তা আগামী কর্মদিবসে বাতিল করে দিতে পারি। তারা (বন বিভাগ) যদি মেলার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঠিক রাখতে না পারে তাহলে আর মেলা করবো না। কারণ আমরা বিতর্ক চাই না।

এ সময় ইউএনও আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ আরও বলেন, আপনাকে (প্রতিবেদক) দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আমরা কোনো মেলার আয়োজন করিনি বা উপজেলা প্রশাসন কোনো মেলার আয়োজন করেনি। মেলাটি বন বিভাগই করেছে, আমরা শুধু সহযোগিতা করেছি। মেলায় বৃক্ষের একটি মাত্র দোকান, এই বিষয়টি গতকালকই আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ ছাড়া আপনার সহকর্মীরা (সাংবাদিক) বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। ভাড়া তোলার বিষয়টিও আমাদের জানা নেই।

ইউএনও বলেন, গণমাধ্যমে দেখলাম আমাদের চেয়ারম্যান মহোদয় (উপজেলা চেয়ারম্যান) বলেছেন মেলার বিষয়টি তিনি জানেন না। আসলে এটা ঠিক নয়, কেননা যে মিটিংয়ে মেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ওই মিটিংয়ে উনি নিজেই সভাপতিত্ব করেছেন। হয়তবা উনি বিষয়টি ভুলে গেছেন। বন বিভাগ কেন এখন মেলার বিষয়ে অস্বীকার করছে তা তারাই ভালো বলতে পারবে।

গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান ঢালী গত ৩০ জুন দায়িত্ব শেষ করেছেন। অন্যদিকে পহেলা জুলাই নতুন জনপ্রতিনিধিরা শপথ গ্রহণ করেছেন। ইউএনওর দেওয়া ভাষ্যমতে ওই মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেছেন সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান ঢালী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফজলুর রহমান ঢালী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউএনও কী বলছেন, সেটা আমি জানি না। তার সঙ্গে গত এক বছরে কোনো মিটিংয়ে বা ব্যক্তিগতভাবে মেলা সংক্রান্ত কোনো আলাপ হয়নি আমার। মেলা সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে মোবাইলে আমাকে রেখে তার কাছে জানতে চাইতে পারেন। অনেক সময় মিটিং না করে ইউএনও সাহেবদের ওপর ভরসা রেখে অনেক কাগজে আমাদের স্বাক্ষর করতে হয়। কিন্তু আমি সাধারণত কোনো কাগজ না পড়ে স্বাক্ষর করি না। আমি আবারও বলছি, অন্ধভাবে কোনো কাগজে আমি স্বাক্ষর করি না। মেলা সংক্রান্ত কোনো মিটিং বা আলাপ ইউএনওর সঙ্গে আমার হয়নি।

বন বিভাগ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যান কেউই স্বীকার করছেন না একটি গাছের দোকান দিয়ে বৃক্ষমেলার আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান কোনটি? বিষয়টি নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) শরীয়তপুরের সভাপতি অ্যাডভোকেট রাশিদুল হাসান মাসুম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ কেমন অদ্ভুত বিষয়! উপজেলা প্রশাসনের মাঠে মেলা হচ্ছে, আয়োজক কে তা কেউ স্বীকার করছে না। এ ধরনের কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন আমি প্রথম হলাম। বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন দপ্তরের খতিয়ে দেখা উচিত।

সাইফ রুদাদ/এমজেইউ