উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে জামালপুরে বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ২১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

শনিবার (৬ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে আরও ১ সেন্টিমিটার পানি কমে বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বন্যার পানিতে জেলার ২১৪টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। ইসলামপুর উপজেলায় ৩০টি, দেওয়ানগঞ্জে ২৫টি, মাদারগঞ্জে ৭টি ও বকশীগঞ্জে ১টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সদর উপজেলা ছাড়া দেওয়ানগঞ্জ , বকশীগঞ্জ, মেলান্দহ ১৫১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

জানা যায়, যমুনার পানি বেড়ে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার সদর ইউনিয়ন, চিনাডুলী, পাথর্শী, সাপধরী, বেলগাছা, কুলকান্দি, নোয়ারপাড়া, পলবান্দা, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন, চিকাজানী, চুকাইবাড়ী, বাহাদুরাবাদ, চর আমখাওয়া, ডাংধরা, পাররামরামপুর, হাতিভাঙ্গা, পৌরসভা, মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া, মাহমুদপুর, মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ ও জোড়খালী ইউনিয়ন, বকশীগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার নিম্ন অঞ্চলের ইউনিয়নসহ ৩৪টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে‌। এতে প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। 

জামালপুর জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তারেক মো. রওনাক আখতার ঢাকা পোস্টকে বলেন, জামালপুর সদর উপজেলা ছাড়া জেলার ছয় উপজেলায় ১৫১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকাল রোরবার এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। 

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এসএম মোজাম্মেল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলাসহ ৬৩ মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যেসব বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে পানি ঢুকেছে সেসব প্রতিষ্ঠানে মূল্যায়ন পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে ।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক আবদুল মান্নান ঢাকা পোস্টকে বলেন, যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এক সেন্টিমিটার পানি কমেছে। যমুনার পানি বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধীর গতিতে পানি নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন যমুনা তীরের নিম্নাঞ্চলের মানুষ। এসব অঞ্চলের মানুষ হতদরিদ্র। অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে থাকায় অনেক দিনমজুরের আয়-রোজগার বন্ধ। এতে কষ্টে রয়েছেন দিনমজুরেরা।

এছাড়াও সড়ক ভেঙে উপজেলা শহরের সঙ্গে নিম্নাঞ্চলের ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ১৯০ মেট্রিক টন চাল ও ১ হাজার ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪৫ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ পর্যাপ্ত রয়েছে। যে কোনো এলাকায় বন্যা ও ভাঙনের খবর পেলেই সেখানে দ্রুত ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে।

রকিব হাসান নয়ন/আরএআর