অভিযুক্ত নাহিদা খাতুন

‘আমি ঘুম থিকে উইঠি, আমার ছোট বুইনডার (বোন) সাথে খেলতে ছিলাম। তখন আমার মা আমাদের ডাইকি কাপে কোইরি গুলিয়ে শরবত খাওয়াইছিলে। প্রথমে আমাকে খাওয়ায়, তারপর বুইনকে খাওয়াইছিলো। আমি আর আমার বুইন ওই শরবত খায়ে অসুস্থ হয়ে যাই। পরে আব্বা মাঠে থিকে আইসি হাসপাতালে নিয়ে যায়। শরবত বুইলি আমাদের বিষ খাওয়ায়ছিলো মা। মায়ের দেয়া শরবত খায়ে বুইনডা মোইরি গিছে আর আমি অসুস্থ। আমি এখন হাসপাতালে আর মা জেলে। আমি সব সত্যি কথা বুলছি, মিত্তি বুলছি না।’ 

শনিবার (৬ জুলাই) দুপুরে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু আলিফ আলী (৫) । 

গত বুধবার (৩ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের আল্লারদর্গা সোনাইকুন্ডি গ্রামে এ ঘটে। বিষপানে মিম খাতুন (৩) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার আপন ভাই আলিফ আলী অসুস্থ অবস্থায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। 

নিহত মিম খাতুন ও অসুস্থ আলিফ সোনাইকুন্ডি গ্রামের কৃষক শুভ আলীর মেয়ে। শুভ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি মাঠে ছিলাম। দুপুর ১টার দিকে মাঠ থেকে বাড়িতে এসে দেখি শিশুরা কাঁদছে, চিৎকার করছে, তাদের মুখ থেকে লালা ঝরছে। পরে তাদের নিয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাই। অবস্থার অবনতি হলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেইদিন (বুধবার) বিকেল ৩টার দিকে মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। ছেলে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে শুভ আলী বলেন, আমার ধারণা খেলতে খেলতে ঘরে রাখা দানাদার বিষ খেয়েছিল। আমার মেয়েটা মারা গেছে, ছেলেটা অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। শুক্রবার আমার বউকে পুলিশ আটক করে জেলে পাঠিয়েছে। আসলে কী করে বিষ খেয়েছে বা কী ঘটনা ঘটেছে সেটা আমি জানি না। আমি মাঠে কাজ করছিলাম। বাসায় এসে দেখি ছেলে-মেয়ে কাঁদছে, চিৎকার করছে, তাদের মুখ থেকে লালা ঝরছে।

গত বুধবার অর্থাৎ যেদিন ঘটনা ঘটেছে সেই দিন সন্ধ্যায় এ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার নিহত মিম ও আহত আলিফের মা নাহিদা খাতুনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি। 

মিম ও আলিফের দাদি রশুনা খাতুন বলেন, কীভাবে বিষ খেয়েছে তা জানি না। আমি ওই সময় বাড়িতে ছিলাম না। দুজনেই শিশু, হয়তো খেলতে খেলতে ভুল করে বিষ খেয়ে ফেলেছে। এটা ধারণা করছি। আসলে কী ঘটেছে সেটা জানি না। 

এ বিষয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার জানান, বিষপানে একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তার ভাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। 

এ বিষয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষপানে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আরেক শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় কেউ মামলা করেনি। এলাকায় বিভিন্ন গুঞ্জন চলছে। এজন্য শুক্রবার দুই শিশুর মা নাহিদা খাতুনকে ফিফটি ফোরে আটক করা হয়েছে। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমরা ওর বাবাকে বলেছি, অভিযোগ থাকলে মামলা দিতে। কিন্তু মামলা করেনি। তার বাবা হাসপাতালে আহত শিশুর কাছে আছে। অভিযোগ দিলে অভিযোগ নেব। 

রাজু আহমেদ/আরএআর