গাইবান্ধায় দুর্ভোগে বানভাসিরা, আশ্রয় নিচ্ছেন বাঁধে
উজানের ঢল এবং গত সপ্তাহের অব্যাহত বৃষ্টিতে গাইবান্ধার সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলাসহ চার উপজেলার চরাঞ্চল ও নদীর তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়ে দেখা দিয়েছে বন্যা। চার উপজেলার ২৯টি ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৭০ হাজার পরিবার। বন্যায় বাড়ি-ঘরে পানি ওঠায় দুর্ভোগে পড়েছেন ওইসব এলাকার বন্যার্ত মানুষেরা। এ অবস্থায় বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকটসহ সাপ ও বিভিন্ন পোকা-মাকড়ের ভয় আঁকড়ে ধরেছে তাদের। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে বানভাসি মানুষেরা গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও কঠিন সময়ের শেষ সম্বলটুকু নিয়ে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন নিকটবর্তী বাঁধে।
জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গাইবান্ধার সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন, সুন্দরগঞ্জে ৯টি, সাঘাটায় ৮টি ও ফুলছড়ি উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে । এই ২৯ ইউনিয়নে পানিবন্দি ৬৭ হাজার ৭২৯টি পরিবার। এরমধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ৩৯ হাজার ৮৮৯টি, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ৫ হাজার, সাঘাটা উপজেলায় ১৫ হাজার ১৫০টি ও ফুলছড়ি উপজেলার ৭ হাজার ৪৯০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। যদিও স্থানীয়দের দাবি বাস্তবে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা আরো অনেক বেশি।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে, ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের মধ্য কাতলামারি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি। এসব এলাকার চারদিকেই থই থই পানি। নিম্নাঞ্চলের সঙ্গে নদী তীরবর্তী এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছে পড়েছে। তলিয়ে গেছে টয়লেট-টিউবয়েল। আঙিনা, ঘর-দরজা সবখানেই পানি আর পানি। ফলে বন্যার্ত মানুষেরা আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন পুরাতন বাঁধে। তারা গৃহপালিত পশু নিয়ে বাঁধে উঠেছেন। বাঁধে অনেকেই বাঁশ, পলিথিন পাটকাঁঠি ও খড় ব্যবহার করে অস্থায়ী ঘর তৈরি করছেন।
মধ্য কাতলামারি গ্রামের উমর ফারুক মিয়া বলেন, বাড়ির সব জায়গায় পানি উঠেছে। পাঁচদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় আছি। খাটের ওপর চুলা বসিয়ে রান্না করতে হচ্ছে। ঠিকমতো তিন বেলা খাওয়া হচ্ছে না। আজকে বাধ্য হয়ে পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে কোনমতো একটা ঘর বানিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিলাম।
একই গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, পাঁচদিন ধরে বাড়ি-ঘরে পানি। কমার কোনো নাম নেই। ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে খুবই কষ্টের মধ্যে আছি। খুব চেষ্টা করেছি বাড়িতে থাকার কিন্তু পানিতে থাকতে না পেরে পুরাতন ও কাঠ দিয়ে বাঁধে ঘর তুলেছি। পানি না কমা পর্যন্ত এই ঘরেই থাকতে হবে।
এদিকে জেলার চার উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে ও শিক্ষাঙ্গনের ভেতরে বন্যার পানি উঠায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ জেলার ৮১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগ। অন্যদিকে, পানিতে নিমজ্জিত ও তলিয়ে গেছে ৩ হাজার ৮৯০ হেক্টর আউশ ধান, পাট, ভুট্টা ও আমন বীজতলা। তলিয়ে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের।
গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খোরশেদ আলী খান বলেন, পানিতে লোকজনের কষ্টের সীমা নেই। এই ইউনিয়নসহ বন্যাকবলিত অধিকাংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। কিছু লোক বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। গাইবান্ধা-০৫(সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের সংসদ সদস্য মাহামুদ হাসান রিপনের সহযোগিতায় শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও নদগ টাকাও বিতরণ শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে সব এলাকাতেই বিতরণ করা হবে।
রিপন আকন্দ/জেডএস