রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীর চরে ধানের খেতে কাজ করার সময় রাসেলস ভাইপার সাপ আলম বিশ্বাসের (৫০) হাতে কামড় দেয়। এই ঘটনা এক বছর অতিবাহিত হলেও তিনি এখনও পরিপূর্ণ সুস্থ হননি। সাপে কামড়নো হাতের আঙুলে পচন ধরার পরে বর্তমানে তা অস্বাভাবিক অবস্থায় রয়ে গেছে। তাই আলম বিশ্বাসকে এক হাতে সারতে হয় যাবতীয় কাজ।  

শুক্রবার (৫ জুলাই) দুপরে বাঘা উপজেলার নদীবর্তি চকরাজাপুর এলাকায় বসতবাড়ির আঙ্গিনায় আলম বিশ্বাসের সাথে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। আলম বিশ্বাস বলেন, ‘সাপে কামড়ানো আঙুলটা এখনও ব্যাথা করে। হালকা আঘাতেই রক্ত ঝরে। কোনো দিন ভাবিনি, আঙুলের এই অবস্থা হবে।’

সাপে কামড়ানোর ঘটনার দিনে বর্ণনায় আলম বিশ্বাস বলেন, ‘গত বছর ২০২৩ সালে রাসেলস ভাইপার সাপে কামড় দিয়ে ছিল পদ্মার চরের ধানের জমিতে কাজ করার সময়। সেদিন ১৬ জন শ্রমিক নিয়ে ধানের খেতের আগাছা পরিষ্কার করতে গিয়েছিলাম। সাপ আগে থেকে ছিল। কিন্তু আমি দেখিনি। আগাছা পরিষ্কারের জন্য বাম হাত বাড়িয়েছি আর সাপে আঙুলে কামড় দিয়েছে। তখন হাতের উপরে রশি দিয়ে শক্ত করে  বেঁধে ফেলি। তখন লোকজন মিলে জীবিত সাপ ধরে ফেলে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরাও বলেছিল রাসেলস ভাইপার সাপে তাকে কামড় দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাড়ে ৫ মাস চিকিৎসা নিয়েছি। রাজশাহী ও ঢাকায় মেডিকেলে চিকিৎসা ছাড়াও বাঘা ও কুষ্টিয়া ওঝার কাছে চিকিৎসা নিয়েছি। তবু পুরো সুস্থ হতে পারিনি। এখনও সাপের বিষের ব্যথা আছে আঙুলে। আমার সাহস ছিল, আর আল্লাহ হায়াত দিয়েছিল বলে বেঁচেছি। এবারও পদ্মার চরে ১৮ বিঘা জমিতে বাদামের চাষ করেছি। নদীতে বানের (বন্যা) পানি ঢুকে যাওয়ায় সাড়ে ৪ থেকে ৫ বিঘা জমির বাদাম তোলা হয়নি। শুধু সাপের ভয়ে পানিতে বাদাম তুলতে নিজে যাইনি। সাপের ভয়ে শ্রমিকরাও যায় না। বাদাম খেত এখন পানিতে তলিয়ে গেছে।’  

এখনও সুস্থ হতে পারেন দাবি করে আলম বিশ্বাস বলেন, ‘সাপে কামড়ানোর পর বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে পচন ধরেছে। এরপরে ওষুধ খেতে খেতে আঙুল কুকড়ে গেছে। সাপে কামড়ানো আঙুলে হাত দিলে ব্যথা করে। এই হাতের আঙুলের সাহায্যে কোনো কাজ করা যায় না। একটু লাগলে রক্ত বের হয়ে যায়। এখন আঙুলের ভেতরে ঘাঁ আছে। সাপের (রাসেলস ভাইপার) কামড়ে চিকিৎসা বাবদ তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সেই ধাক্কায় প্রাণে বেঁচে গেছি।’

আলম বিশ্বাসের স্ত্রী নালজান বেগম বলেন, ‘গত বছর পদ্মার চরে সাপে কামড় দেয় আমার স্বামীকে। লোকালয়ে নিয়ে আসার পরে তার চোখ মুখ নীল হয়ে গিয়েছিল। তার মুখে কথা ছিল না। সেই সাপটা বড় ছিল। শুধু এক নজর দেখেছিলাম সাপটি। তাকে (স্বামী) নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বাঘার মনিকগ্রামে ওঝার কাছে। সেখানে ওঝা তাকে কিসের জানি পাতা খেতে দিয়েছিল। তার এক ঘণ্টা পরে তার (স্বামী) জ্ঞান ফিরেছিল।

নালজান বেগম আরও বলেন, ‘তার আগে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছিল। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে অনেকদিন চিকিৎসা নেওয়া হয়েছে। তারপরে নেওয়া হয় কুষ্টিয়া জেলায়। এখন সে তেমন কাজ-কর্ম করতে পারে না। এই আঙুল নিয়ে কিছু ধরলে এখনও রক্ত পড়ে। ফলে এক হাতে সব কাজ করতে হয় তাকে।’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু শাহীন চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে গবেষণা করেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ব্যথা হতে পারে। তবে সার্বিক বিষয় নিয়ে রোগীর সাথে যোগাযোগ করতে চান এই চিকিৎসক।

এ বিষয়ে রাসেলস ভাইপার উদ্ধার নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রশিক্ষক বোরহান বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘসময় ব্যথা থাকে। তার (আলম) আঙ্গুলের সমস্যা হয়েছে। অনেকের চোখ ছাড়াও শরীরে বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি হয়। তবে এই প্রশিক্ষক ও রোগীর সাথে যোগাযোগ করতে চান।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু দেওয়ান বলেন, পদ্মায় পানি বাড়ার সাথে সাথে পাড় ভেঙেছে। অনেক জায়গা প্লাবিত হয়েছে। ফলে সাপের আশ্রয়স্থানগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। তাই সাপ উঁচু স্থান বেছে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে নদীবর্তী এলাকাগুলোতে বেড়েছে সাপের উপদ্রব। তবে সাপের উপদ্রব এড়াতে চরের লোকজনকে সাবধানে চলাচলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

শাহিনুল আশিক/আরকে