রাস্তার বেহাল দশা, ভেঙে যায় বিয়ে
প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার পুরোটা একেবারেই কাঁচা। প্রতি বর্ষায় এই রাস্তা যেন অভিশাপ নিয়ে আসে কয়েকটি গ্রামের মানুষের জন্য। কাছ থেকে দেখলে এটিকে রাস্তা বললেও ভুল হবে। অনেকটা ধান রোপণ করার উপযোগী ক্ষেতের মতো। গাড়ি তো দূরে থাক, হেঁটে পার হওয়াই মুশকিল। তারপরও প্রয়োজনের তাগিদে ওই রাস্তা দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় এমনই এক রাস্তার সন্ধান পাওয়া গেছে। উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব অংশের দুটি ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে হওয়ায় এক ইউনিয়ন আরেক ইউনিয়নের দিকে তাকিয়ে থাকে। ফলে বছরের পর বছর কাদায় ডুবে থাকে এই রাস্তাটি। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে উপজেলার কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের। চলাচলে দুঃসহ অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বিয়ে পর্যন্ত ভেঙে যাওয়ার অভিযোগও করেছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
বিজ্ঞাপন
উপজেলার দক্ষিণ শীলমুড়ি ইউনিয়নের শিয়ালোড়া এবং গালিমপুর ইউনিয়নের ঘোষ্পা গ্রামে ওই রাস্তাটির অবস্থান। এই রাস্তা দিয়ে গালিমপুর ইউনিয়নের ঘোষ্পা গ্রাম থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ শীলমুড়ি ইউনিয়নের শিয়ালোড়া, জয়াগ হয়ে আলোকদিয়া ও সুলতানপুর বাজার পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াত। কিন্তু প্রতি বর্ষায় এ রাস্তায় যেন অভিশাপ নেমে আসে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এই রাস্তার পুরোটাই কাদামাটিতে আবৃত। কাদার কারণে এই রাস্তায় কোনো গাড়ি আসতে চায় না। জরুরি প্রয়োজনে ৩-৫ গুণ পর্যন্ত বেশি ভাড়ায় গাড়ি আনতে হয়। চলাচলাকারীদের জুতা হাতে নিয়ে কাপড় হাঁটু পর্যন্ত তুলে কোনোরকমে পা টিপে টিপে পার হতে হয়। গুরুতর অসুস্থ কাউকে হাসপাতালে নিতে হলে বেগ পেতে হয়। অ্যাম্বুলেন্সসহ যেকোনো গাড়ির চালক রাস্তার নাম শুনলেই সাথে সাথে না করে দেন। ফলে বাড়তি ভাড়ায় রাজি করাতে হয়।
শিয়ালোড়া গ্রামের বাসিন্দা ময়নাল হোসেন বলেন, আমার বয়স এখন ৫৮ বছর। জন্মের পর থেকেই এ রাস্তাটি এমনই দেখছি। এই ইউনিয়ন ওই ইউনিয়নকে দেখায়। বেশ কয়েকবার স্থানীয় সংসদ সদস্যরা এসে আশ্বাস দিলেও আশ্বাস পর্যন্তই শেষ। আমরা যেন এই এলাকায় জন্মে ভুল করেছি।
আবুল কালাম নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, একবার আমার মেয়ের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। কিন্তু রাস্তার বেহাল দশার কারণ দেখিয়ে বরপক্ষ বিয়ে প্রত্যাখ্যান করে দেন। এলাকার মানুষ চেয়ারম্যানদের কাছে বার বার গেছে। কিন্তু কোনো কাজই হচ্ছে না।
জিহাদ হোসেন নামে এক কলেজছাত্র বলেন, আমি বিজরা কলেজে পড়াশোনা করছি। কলেজে যেতে হলে আমার একমাত্র পথ এই রাস্তা। অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার সময় একদিন পা পিছলে পড়ে আমার কলেজের ড্রেসে কাদা মেখে যায়, আমাকে বাধ্য হয়ে ওই কাদামাখা ড্রেস নিয়েই কলেজে যেতে হয়েছে। আমার সহপাঠীরা আমাকে নিয়ে অনেক ট্রল করেছে। খুব কষ্ট লাগে। আমাদের কষ্ট নিরসনের কেউ নেই।
মোহসেনা বেগম নামে এক নারী বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ২০ বছর। বিয়ের পর থেকেই প্রতি বর্ষাতে পায়ের কাপড় হাঁটু পর্যন্ত তুলে চলতে হয়। যা আমাদের নারীদের জন্য খুবই অস্বস্তিকর।
দক্ষিণ শীলমুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন ভূইয়া বলেন, রাস্তাটি নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। রাস্তার আইডি পড়ে আছে। কিন্তু ক্যাটাগরি জটিলতায় গ্রামীণ এ রাস্তাগুলো পাকাকরণ সময় সাপেক্ষ হয়ে যাচ্ছে। কাদার মধ্যে ইট ফেললে মানুষের উপকারের চাইতে অপকারই বেশি হবে।
গালিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাচ্চু মিয়া বলেন, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি কয়েক মাস হলো। আগে কী হয়েছে সেটি বলতে পারছি না। তবে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে এই রাস্তাটির জন্য অবশ্যই কিছু করার চেষ্টা করব।
আরিফ আজগর/আরএআর