রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনও বেড়েছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় স্রোত ও ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাট এলাকায় ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

ইতোমধ্যে ৬ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাটের অনেকটা এলাকা পদ্মা নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীতে চলে গেছে কয়েকটি বসতবাড়ি ও দোকানপাট। বিআইডব্লিউটিএ প্রাথমিকভাবে কিছু জিও ব্যাগ ফেললেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এমন অবস্থায় শতাধিক বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও দোকানপাট, স্কুল ও ফেরিঘাটমুখি পাকা সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ৬ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাটের মাঝামাঝি অংশে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে বসবাসরত পরিবারগুলো তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দা আকবর মন্ডল, সবজান শেখ, শিপন খান ও ইজাজ ব্যাপারী বলেন, আমাদের জন্ম এই দৌলতদিয়াতে। জন্মের পর থেকেই আমরা দেখে আসছি এখানে নদী ভাঙন। আমাদের দাদা, দাদি, বাপ, চাচা, মাকে দেখেছি নদী ভাঙন শুরু হলেই তারা ঘর ভেঙে অন্যত্র নিয়ে যেতেন। এখন আমরাও সেটা করছি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তাই করবে। কারণ দৌলতদিয়া ঘাটে ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। আমরা অবিলম্বে এই দৌলতদিয়া ঘাটে স্থায়ী নদী শাসন চাই।

স্থানীয় বাসিন্দা সুরুজ আলী বলেন, ‘আর কত বলব নদী শাসনের কথা, আমাগেরে মতো গরিব মানুষের কথা কিডা শুনে, সবাই যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। সরকার আমাদের দিকে তাকাইলো না। আমরা কিছু চাই না, শুধু নদী শাসন চাই। আমাগেরে চাল, ডাল কিছুই লাগবো না।’

দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল বলেন, আমরা ছোট সময় থেকে দেখে আসছি দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের তিন ভাগের একভাগ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গোয়ালন্দের মানচিত্র থেকে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের ৮টি মৌজা এখন নেই। আমরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বললেও কোনো কাজ হয়নি। প্রতিদিন অসহায় মানুষের কান্নাকাটি, আহাজারি, ঘর সরানো এগুলো দেখতে আর ভালো লাগে না। এত বলার পরও নদী শাসন হলো না। এ অসহায় মানুষের দায়ভার কে নেবে? আমি জনগণের পক্ষ থেকে আবারও বলছি নদী শাসনের যে ব্যবস্থা সেটা যেন দ্রুত করা হয়, তাহলে দৌলতদিয়া ঘাট বেঁচে যাবে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, দৌলতদিয়ায় সাতটি ঘাটের মধ্যে ৩, ৪, ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে। বাকি ১, ২ ও ৫ নম্বর ঘাট কয়েক বছর ধরে ভাঙনের কারণে বন্ধ রয়েছে। এবার যে ভাঙন শুরু হয়েছে এতে পুরো দৌলতদিয়া এলাকা ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে সব কটি ফেরিঘাট ভাঙন ঝুঁকিতে আছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ ভাঙন ঝুঁকি এড়াতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, পদ্মায় পানি বাড়ার কারণেই এতো ভাঙন দেখা দিয়েছি। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছি। আপাতত ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে। তাছাড়া এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে অনেক এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এমএ