গ্রামের হতদরিদ্র কয়েকটি পরিবারের কাছে থেকে সচিব, ডিসি ও ইউএনওর নামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও গভীর নলকূপ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন শরীয়তপুরের এক যুবলীগ নেতা। এমন অভিযোগ তুলে ভেদরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাজিবুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অভিযুক্ত মফিজ উদ্দিন তালুকদার ভেদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সহ-সভাপতি ও নারায়ণপুর ইউনিয়নের পুটিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান তালুকদারের ছেলে।

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও গভীর নলকূপ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে সচিব, ডিসি ও ইউএনওর নামে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মফিজ উদ্দিন তালুকদার। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের সংখ্যা একাধিক হলেও এখন পর্যন্ত ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রাজিয়া বেগম ও ফিরোজা বেগম নামে দুই নারী। 

তাদের দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, যুবলীগ নেতা মফিজ উদ্দিন তালুকদার তিন মাসের মধ্যে নারায়ণপুর ইউনিয়নের বিধবা রাজিয়া বেগমকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও গভীর নলকূপ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে গত বছরের জুলাই মাসে ২৫ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু তিন মাসের স্থলে বছর পেরিয়ে গেলেও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও গভীর নলকূপ পায়নি তারা। দীর্ঘদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরে রাজিয়া বেগম টাকা ফেরত চাইলে তাকে টাকাও ফেরত না দিয়ে বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন যুবলীগ নেতা মফিজ উদ্দিন তালুকদার।

অপর অভিযোগকারী ভেদরগঞ্জ পৌরসভা এলাকার ফিরোজা বেগমের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের মে মাসে গভীর নলকূপ দেওয়ার কথা বলে মফিজ উদ্দিন তালুকদার তার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু নলকূপ না দেওয়ায় টাকার জন্য চাপ দিলে ফিরোজা বেগমকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখায় সে।

এছাড়া নারায়ণপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ইউনিয়নের বাসিন্দা বাদল তালুকদারের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকাসহ নড়িয়া উপজেলার ফতেজঙ্গপুর ইউনিয়নের কানারগাঁও গ্রামের মনি বেগমসহ একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে সর্বমোট লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে যুবলীগ নেতা মফিজ উদ্দিন তালুকদার।

ভুক্তভোগী রাজিয়া বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মফিজ তালুকদার একদিন আমার বাসায় এসে আমাকে জানায়, তার সঙ্গে সচিব, ডিসি ও ইউএনওর সম্পর্ক খুব ভালো। ৩০ হাজার টাকা দিলে সরকারি ঘর ও গভীর নলকূপ পাবেন আপনি। পরে আমি তাকে ২৫ হাজার টাকা দেই। কিন্তু দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও আমাকে সে কিছুই দেয়নি। টাকা ফেরত চাইলে সে আমাকে ভয়ভীতি দেখায়। আমরা গরিব মানুষ, প্রতারিত হয়েছি। এখন আমি আমার টাকা ফেরত চাই, মফিজ তালুকদারের বিচার চাই।

অপর ভুক্তভোগী ফিরোজা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গভীর নলকূপ দেওয়ার কথা বলে মফিজ তালুকদার প্রায় ৩ বছর আগে টাকা নিয়েছে। কিন্তু সে এখনো নলকূপ দেয়নি। এখন টাকা ফেরত চাইলে হুমকি ধামকি দেয়। তার ভয়ে আমরা কথা বলতে পারি না, আমি আমার টাকা ফেরত চাই।

বাদল তালুকদার নামে একজন বলেন, আমি খুব কষ্ট করে ঘরের জন্য ২১ হাজার টাকা দিয়েছে। কিন্তু মফিজ তালুকদার আমাকে ঘর দেয়নি। টাকাও দেয়নি। আমি আমার টাকা ফেরত চাই।

বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত মফিজ উদ্দিন তালুকদারের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তী সময়ে আবারো চেষ্টা করলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি জামান রাড়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমাকে একজন জানিয়েছেন। এছাড়া আমি বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছি। একজনের নামে আরেকজন অভিযোগ তুলতেই পারে। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রাজিবুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে দুইজন ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছি। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাইফ রুদাদ/আরকে