ময়মনসিংহ নগরীর অন্যতম পুরোনো এলাকা আমলাপাড়া। এখানেই ছিল শেরপুকুর নামে এক বিশাল পুকুর। এক সময় স্থানীয়দের কাছে এই পুকুরটির কদর ছিল অনেক। নিয়মিত গোসল করা থেকে শুরু করে পারিবারিক ও গৃস্থালি কাজেও এই পুকুরের প্রয়োজনীয়তা ছিল অপরিসীম। শিশু-কিশোরদের জলকেলি খেলার পাশাপাশি কখনো নগরীতে অগ্নিকাণ্ড ঘটলেও অগ্নিনির্বাপণে ব্যবহার হত এই পুকুরের পানি।

কিন্তু দীর্ঘ এক যুগে এই পুকুরটি উধাও হয়ে গেছে। চারপাশে দৃষ্টি আটকানো বেড়ায় পুকুরটি ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে উঁচু ভিটি। এতে মৃত্যু ঘটেছে পুকুরটির। নির্মিত হয়েছে ছোট ছোট স্থাপনা। ফলে বর্তমানের প্রজন্মের অনেকেই জানে না এই উঁচু ভিটিতেই এক সময় ছিল বিশাল পুকুর। তাই জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী পথিক নবীর গানের সাথে মিল রেখে বলা যায়- ‘এইখানে এক পুকুর ছিল, জানলো না তো কেউ....।’ 

বুধবার (৩ জুলাই) দুপুরে জেলা প্রশাসনের বিশেষ অভিযানে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে দখলমুক্ত করা হয় পুকুর ভরাট করে তৈরি করা উঁচু ভিটেটি।

এই উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আসাদুজ্জামান রনি। এ সময় জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের সহস্র স্মৃতি বিজড়িত এই শেরপুকুর উদ্ধার হওয়ার খবরে দীর্ঘ সময় বুকে কষ্ট চেপে রাখা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তাদের দাবি, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আবারও এখানে খনন করা হোক শেরপুকুর। যা নগরীর শত ঐতিহ্যের একটি স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে বয়ে চলবে যুগ যুগ ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।  

সূত্র জানায়, শত শত বছরের পুরোনো এই শেরপুকুরের জমির পরিমাণ ২৫ শতক। অনেক বছর আগে এই পুকুরটি মাছ চাষের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লিজ নেন স্থানীয় মো. রেজাউল করিম নামে এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। বিগত ২০১২ সালে এই লিজের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু লিজ নবায়ন না করে এই প্রভাবশালী ব্যবসায়ী পুকুরটি ভরাট করে উঁচু ভবন নির্মাণের পাঁয়তারা করে আসছিল।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আসাদুজ্জামান রনি সাংবাদিকদের বলেন, এই পুকুরটি ছিল অর্পিত সম্পত্তি। ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত ২৫ শতক এই জমির শ্রেণি ছিল পুকুর। কিন্তু লিজ গ্রহীতা এই পুকুরের লিজ নবায়ন না করে পুকুরটি ভরাট করে ভোগ দখল করে আসছিল। এ ঘটনায় বিগত এক সপ্তাহ আগে ওই দখলকারীকে নোটিশ দেওয়ার পর বুধবার অভিযান চালিয়ে পুকুরটি উদ্ধার করা হয়েছে।

আবারও এখানে পুকুর খনন করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা পেলে আবারও এইখানে পুকুর খনন করা হতে পারে। তবে বিষয়টি জেলা প্রশাসন ভালো বলতে পারবে। 

আরএআর