দীর্ঘ ৩৫ বছর ৬ মাস চাকরি করেছেন বাংলাদেশ পুলিশে। বিদায় বেলায় বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা পেয়ে অঝোরে কাঁদলেন এএসআই মো. আবুল কাশেম (৫৪)। কেঁদেছেন তার সহধর্মিণী জান্নাতুল ফেরদৌস ও একমাত্র মেয়ে কামরুন নাহার।

সোমবার (১ জুলাই) বিকেলে তার শেষ কর্মস্থল কবিরহাট থানা থেকে অবসরের দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে এ আয়োজন করা হয়।

সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. আবুল কাশেম তিনি ১৯৮৯ সালের ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর ৬ মাস দেশের বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আবুল কাশেম নোয়াখালীর সুবর্ণচর  উপজেলার চরজব্বর থানার পশ্চিম চর জুবলী গ্রামের মৃত মনোহার আলীর ছেলে। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন।

জানা যায়, বিকেলে বিদায় দেওয়ার সময় আবুল কাশেমের হাতে উপহার তুলে দেন কবিরহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির ও সহকর্মীরা। এরপর সব পুলিশ সদস্য সারিবদ্ধ হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে তাকে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে বিদায় জানান। এরপর পুলিশের সুসজ্জিত গাড়িতে করে তাকে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।

আবুল কাশেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ১৭ জনের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান দেখেছি৷ চাকরি জীবন শেষে এমন সম্মান অনেকের ভাগ্যে জোটে না। আমি আজ সত্যিই আনন্দিত। আমার অবসরে যাওয়ার সময় এমন সম্মান প্রদর্শন করায় নোয়াখালী জেলা পুলিশ ও  কবিরহাট থানার সকল পুলিশ সদস্যকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আবুল কাশেমের সহধর্মিণী জান্নাতুল ফেরদৌস ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাকরির শুরুতে অনেক কষ্ট করেছি। পুলিশের চাকরিতে তেমন বেতন ছিল না। আমার স্বামী আজ অবসরে যাচ্ছেন এত আয়োজন দেখে আমি আনন্দিত। আমার স্বামীর জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। 

আবুল কাশেমের মেয়ে কামরুন নাহার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাবাকে যেভাবে সংবর্ধনা দিলো তা আমরা কখনো ভুলবো না। আয়োজন দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে গেছি। আমার বাবার একটা সুন্দর স্মৃতি হয়ে থাকবে আজকের দিনটা। বাকি জীবন যেন আমার বাবা সুন্দরভাবে কাটাতে পারেন সেজন্য আপনারা আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন। 

কবিরহাট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) তোবারক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের থানার সব থেকে প্রবীণ ফোর্স ছিলেন আবুল কাশেম ভাই। তিনি ৯ মাস আমাদের থানায় ছিলেন। দীর্ঘ সময় মানুষের জন্য ভালো কাজ করেছেন। আমরা তার সর্বাত্মক মঙ্গল কামনা করছি। 

কবিরহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, এএসআই মো. আবুল কাশেম অবসরে যাওয়ার পর আমরা তাকে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছি। তাকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানানোসহ উপহার সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। আমার গাড়িতে করে বাড়িতে প্রেরণ করেছি। উনি একজন গর্বিত পুলিশ সদস্য তাই উনার শেষ দিনটি স্মরণীয় রাখতে এমন আয়োজন করেছি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মোর্তাহীন বিল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুরো আয়োজনে আমি ছিলাম। অসম্ভব সুন্দর আয়োজন ছিল। আমরা কেউই আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. আবুল কাশেম নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে অবসরে গেছেন, এটা বাংলাদেশ পুলিশের গর্ব। আগামীতেও সবার বিদায় বেলায় সুখস্মৃতি হয়ে থাকার মতো এমন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশাবাদী।

হাসিব আল আমিন/এমএসএ