রোকসানা আক্তার

কুমিল্লায় ‘দাফনের’ আট দিন পর রোকসানা আক্তার (৩৪) নামের এক নারী বাড়িতে ফিরেছেন। এ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে জেলাজুড়ে।

জানা যায়, গত ২৬ জুন বিকেলে বাড়ি ফেরেন তিনি। এতে হতবাক হন বাড়ি ও আশপাশের সবাই। এর আট দিন আগে গত ১৮ জুন (ঈদুল আজহার পরের দিন) মৃত ভেবে দাফন করা হয় রোকসানাকে।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ঘটেছে। রোকসানা আক্তার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের রাজবল্লবপুর গ্রামের মৃত তাজুল ইসলামের মেয়ে।

স্থানীয়রা জানান, রোকসানা আক্তার নামের ওই নারী গত মে মাসের শেষের দিকে চট্টগ্রামে তার ছোট ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে যান। গত ১ জুন ভোরে কাউকে কিছু না জানিয়ে রোকসানা বাসা থেকে বের হয়ে আসেন। এতে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তার স্বজনরা। এরপর দীর্ঘদিন আত্মীয়স্বজনের বাড়িসহ সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। গত ১৭ জুন ঈদুল আজহার দিন বিকেলে ফেনী শহরে ভাড়া বাসায় অবস্থানরত রোকসানার খালাতো বোন হাজেরা আক্তার ও খালাতো ভাই শাহজাহান খবর পান ফেনী শহরের জিয়া মহিলা কলেজের সামনে ড্রেনে এক নারীর মরদেহ পড়ে আছে। তারা সেখানে গিয়ে মরদেহের চেহারা রোকসানা আক্তারের চেহারার সঙ্গে মিল দেখে ভাই এবায়দুল হককে জানান। ফেনীর পুলিশ মরদেহের সুরতহাল শেষে উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। রাতেই এবায়দুল হক জিয়া মহিলা কলেজের ড্রেন এলাকায় পৌঁছে স্থানীয়দের রোকসানার ছবি দেখিয়ে মরদেহটি একই রকম কি না জিজ্ঞেস করলে সবাই ছবির সঙ্গে মিল রয়েছে বলে জানান। পরে এবায়দুল হক আত্মীয়স্বজনসহ ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে মরদেহ উদ্ধারকারী উপপরিদর্শক প্রতুল দাসের সঙ্গে দেখা করে বোন রোকসানার ছবি দেখান। পরে তারা রোকসানার মরদেহে শনাক্ত করেন। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ এবায়দুল হকের হাতে বোন রোকসানা আক্তারের মরদেহ হস্তান্তর করে। ওইদিন বাদ আছর গুণবতী ইউনিয়নের রাজবল্লবপুর মধ্যমপাড়ায় সামিশকরা দিঘির দক্ষিণ পাড়ে তার মরদেহ দাফন করা হয়।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) রোকসানা আক্তারের সঙ্গে সরাসরি কথা হয় কুমিল্লায় কর্মরত সাংবাদিকদের। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি চট্টগ্রাম ভাইয়ের বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে ঢাকায় চলে যাই। সেখানে গিয়ে আমি একটি চাকরি পেয়েছি। যেহেতু আমি বাড়ি থেকে কোনো কাপড় নিয়ে যাইনি, তাই কাপড় নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়িতে ফিরে আসি। ২৬ জুন বাড়িতে এসে দরজায় নক করলে আত্মীয়স্বজনরা আমাকে দেখে হতবাক হয়ে যান। তখন আমি জানতে পারি, আমি নাকি মারা গেছি! আমার মরদেহও দাফন করা হয়ে গেছে। আমি তো জীবিত ফিরে আসলাম।

রোকসানার ভাই এবায়দুল হক বলেন, ছবিতে কিছুটা মিল থাকার কারণে বোনের মরদেহ মনে করে পুলিশ থেকে মরদেহে এনে দাফন করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে রোকসানা জীবিত বাড়ি ফিরলে ফেনী মডেল থানায় গিয়ে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু মুসা বলেন, লোক মারফতে বিষয়টি শুনেছি। তবে কার মরদেহ দাফন করা হয়েছে সেটিই এখন দেখার বিষয়।

ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক প্রতুল দাস বলেন, উদ্ধার করা মরদেহটি বিকৃত ছিল। এবায়দুল হক ও তার স্বজনরা উদ্ধারকৃত মরদেহটি রোকসানার বলে শনাক্ত করে আমার কাছ থেকে নিয়ে যায়। এখন যেহেতু তাদের বোন সশরীরে বাড়িতে উপস্থিত হয়েছেন তাই আমরা বিষয়টি নতুন করে তদন্ত করবো।

চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের ওসি ত্রিনাথ সাহা বলেন, ওই নারীর নিখোঁজ, উদ্ধার, দাফন ও আবার ফিরে আসার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো যাবে।

আরিফ আজগর/এমজেইউ