গত দুই দিনের অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও সীমান্ত দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করায় ডুবে গেছে নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট। ঢলের পানির বেগ বেশি থাকার কারণে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। যানবাহন চলাচল করতে না পারায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারছে না সীমান্ত এলাকার লোকজন। 

গত ১৬ জুন থেকে বন্যা আক্রান্ত ছিল সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় সবকটি উপজেলা। সেই বন্যার ক্ষত শুকানোর আগেই ফের বন্যার কবলে পড়ে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারীরা বিপাকে পড়েছেন। অনেকে বাধ্য হয়ে ঢলের পানিতে ভেসে আসা ময়লা-আবর্জনাসহ বসতঘরে অবস্থান করছেন। বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হচ্ছে তাহিরপুরের নিম্নাঞ্চল। উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের জঙ্গলবাড়ি-কলাগাঁও- চারাগাও উচ্চ বিদ্যালয় রাস্তা ও সোনাপুর-লামাকাটা রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে সহস্রাধিক পরিবারের লোকজন। 

স্থানীয়দের তথ্য মতে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ সদর , তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার সড়ক ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। তাহিরপুরের যাদুকাটা নদী, চারাগাঁও, কলাগাঁও, লাকমাছড়া, চানপুর এলাকা দিয়ে পাহাড়ি ঢল বেশি নামছে। আর এই ঢলে সীমান্ত এলাকায় পানি প্রবেশ করায় প্লাবিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। 

লামাকাটা এলাকার বাসিন্দা আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ আমি। পরিবারে সদস্য চারজন। এই কদিন টানা বৃষ্টির কারণে কাজে যেতে পারছি না। ঈদের দিন ১৭ জুন পাহাড়ি ঢলে আমার ঘরের একাংশ ভেসে যায়। এখনো ঠিক করতে পারিনি। ধারদেনা করে যখন ভাবলাম ঘর মেরামত করবো আবার ঢলের কবলে পড়ে গেলাম। 

কলাগাঁও গ্রামের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার জানায়, স্কুল খোলা থাকার কারণে স্কুলে যেতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ভিজে স্কুলে যাওয়ার পর ক্লাসে বসে থাকাটাও বিরক্তিকর। আবার বন্যা পরিস্থিতির কারণে অনেকে স্কুলেও আসতে পারছেন না।

একই এলাকার সুফিয়ান ঢাকা পোস্টকে জানান, তিন দিন হয় বাসায় ফিরেছি। এর আগে বন্যার কারণে পরিবার নিয়ে আত্মীয়ের বাসায় ছিলাম। বাড়ি ফিরে আবার বন্যার দেখা। এখন কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। 

অপরদিকে তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের শক্তিয়ারখলায় ১০০ মিটার ৩ ফুট পানির নিচে থাকায় রোববার ভোর থেকেই তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। তাই জেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় এই রাস্তায় চলাচলকারীরা নৌকাযোগে রাস্তাটি পারাপার হচ্ছেন। পরে আবার বিভিন্ন বাহন নিয়ে যাচ্ছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। 

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে জানান, চারাগাঁও সীমান্ত দিয়ে এবার প্রচুর পরিমাণে পাহাড়ি ঢল নামছে। মূলত এ কারণে পানি দ্রুত বাড়ছে। পানি বৃদ্ধির জন্য তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সবাইকে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। 

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে জানান, দুদিন ধরে সুনামগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হওয়ার কারণেই মূলত পানি বাড়ছে। পানি আরও বাড়তে পারে। আগামী দুই দিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলেও বড় কোনো সমস্যা হবে না ।

আরএআর