বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় হস্তান্তরের আগেই ভেঙে পড়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি রাস্তার বিভিন্ন অংশ। নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়ম করায় মাত্র তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই রাস্তাটি ভেঙে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারদের দাবি ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে পানির চাপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রাস্তার এই দশা। 

বরগুনা এলজিইডি কার্যালয়ের তথ্য সূত্রে জানা যায়, পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে পর্যটন কেন্দ্র হরিণঘাটায় যেতে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার পুরাতন রাস্তার উপর নতুন রাস্তা ও দুপাশে ৬ ফিট প্রশস্তকরণের কাজ করা হয়। এলজিইডির তত্ত্বাবধানে প্রশস্ত ও শক্তিশালী করণ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ৬ কোটি ৭২ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ব্যয় ধরা ওই রাস্তাটির নির্মাণের টেন্ডার পান পটুয়াখালীর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স আবুল কালাম আজাদ। পরে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে সাব কন্ট্রাক্ট নিয়ে কাজটি বাস্তবায়ন করেন বরগুনার দুই ঠিকাদার আনোয়ার হোসেন শাহিন ও আমতলির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম মৃধা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাস্তা নির্মাণের কাজ গত তিন থেকে চারমাস আগে শেষ হলেও এখনো হস্তান্তর করেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা। তবে এই অল্প সময়ের মধ্যেই রাস্তাটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় রেমাল ও বৃষ্টিতে বিভিন্নস্থান থেকে রাস্তার দুপাশের এজিং ভেঙে ভেতর থেকে নির্মাণ সামগ্রী বের হয়ে আসছে।

নির্মাণকাজে অনিয়ম হয়েছে জানিয়ে পাথারঘাটা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, রাস্তার কাজ যখন শুরু হয় তখনই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করা হয়েছে। বিষয়টি আমি দেখার পর সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছি। কিন্তু তারপরেও কাজ চলতে থাকে। এছাড়া রাস্তার দুই পাশে যে মাপের সোল্ডার করার কথা তা করা হয়নি। এ কারণেই এত অল্প সময়ের মধ্যেই রাস্তাটি ভেঙে গেছে। 

এত দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তা ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে ঠিকাদর আনোয়ার হোসেন শাহিন বলেন, রাস্তার কাজ এখনো চলমান। কার্পেটিং এর কাজ কিছু জায়গায় বাকি রয়েছে। এর মধ্যেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ রেমালে অতি বৃষ্টির কারণে পানির চাপে রাস্তাটি দুই তিন জায়গা থেকে ভেঙে গেছে। চলমান বৃষ্টিতে রাস্তার আরও কিছু অংশ এখনো ভেঙে যাচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষ আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন, তারা যেভাবে বলবে আমি সে অনুযায়ী রাস্তাটি মেরামত করে দেব। 

পাথরঘাটা এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, রাস্তা কাজ এখনো চলমান আছে। সাড়ে ৪ কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র ২০০ ফুট রাস্তা ভেঙেছে। রাস্তার সোল্ডারের মাটির কাজ শেষ না হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল ও বৃষ্টি পানিতে রাস্তার ওই জায়গা থেকে ভেঙেছে। এছাড়া ঠিকাদারের এখনো প্রায় দেড় কোটি টাকার বিল পাওনা রয়েছে। বৃষ্টির কারণে কাজ করতে পারছেন না, বৃষ্টি কমলেই ঠিকাদার সোল্ডারের মাটির কাজ করবেন।

এ বিষয়ে বরগুনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান খান বলেন, পাথারঘাটার রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়েছি। উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি এবং তাদের থেকে একটি প্রতিবেদন নিয়ে দেখেছি রাস্তার কাজ এখনো চলমান রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতেই রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিক প্রতিবেদন থেকে জেনেছি। এছাড়া আমি দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বলেছি রাস্তার সব ক্ষতি এবং কাজ শেষ করার পরেই চুড়ান্ত বিল পরিশোধ করা হবে।

আব্দুল আলীম/আরকে